তাইওয়ানের উপহার গ্রহণ, ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে ঢাকাকে চীনের টেলিফোন

তাইওয়ানের উপহার গ্রহণ, ‘দুঃখ’ প্রকাশ করে ঢাকাকে চীনের টেলিফোন

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় তাইওয়ানের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে টেলিফোন করে নিজেদের দুঃখ পাওয়ার কথা জানিয়েছে চীন।

চীনের দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মৌখিকভাবে এই বার্তা দেয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করে। এখানে তাইওয়ানের সঙ্গে আলাদা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের কোন বিষয় নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চীনের দূতাবাস থেকে মৌখিকভাবে টেলিফোন করে তাদের মনোঃকষ্টের বিষয়টি জানিয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করে, সেই দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয়নি।’

তিনি জানান, ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পেরেছেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে তারা গিয়েছিলেন। চীনের দূতাবাসকেও এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

যা ঘটেছিল
গত ৩১ অগাস্ট ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বেশ কিছু মেডিকেল সামগ্রী প্রদান করে তাইওয়ান। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, বাণিজ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তিন মন্ত্রী এবং তিন সচিব।

তাইওয়ান এক্সটারনাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল নামে একটি প্রতিষ্ঠান এক লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৬০০ এন-৯৫ মাস্ক, ২০ হাজার কাপড়ের মাস্ক, ১০ হাজার ফেস শিল্ড, পিপিই, গগলস, দুই সেট ভেন্টিলেটর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।

তাইওয়ানের আধা-সরকারি অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশে তাইওয়ানের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে কাজ করে।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা তিন মন্ত্রীর একজন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলছেন, ''তাইওয়ানের কাছ থেকে উপহার সামগ্রী নেয়া হচ্ছে সেটা আমরা জানতাম না। আমাদের বলা হয়েছিল, ওয়ালটন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কিছু উপহার সামগ্রী দেবে। হেলথ মিনিস্ট্রি এটার আয়োজন করেছিল।''

''ওখানে গিয়ে আমরা শুনলাম, তাইওয়ান থেকে ওনাদের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। এর বেশি আমাদের জানাও ছিল না, আমরা জানতামও না যে এখানে তাইওয়ানের কোন ব্যাপার আছে।''

বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কে কী প্রভাব পড়তে পারে?
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন মুন্সি ফয়েজ আহমেদ। তিনি বলছেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার একটি বিশেষ শর্ত হলো, এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করতে হয়। সেটার ব্যতিক্রম করলে চীন সেটা খুশি মনে মেনে নেয় না। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ যখন 'এক চীন' নীতির কথা বলে, সেটা তারা মেনে চলে।

তিনি জানান, অনেক শক্তিধর দেশ হয়তো ব্যতিক্রম করে, কিন্তু সেখানেও চীন যে খুশি হয় না, সেটা জানাতে তারা দ্বিধা করে না।

‘তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কোন দেশকে চীন বাধা দেয় না, সেটা তাদের নীতি নয়। কিন্তু তারা চায়, তাইওয়ান যে একটি আলাদা রাষ্ট্র নয়, সেটা যেন খেয়াল রাখা হয়। সেরকম কোন সম্পর্ক যেন গড়ে তোলা না হয়।’

উপহার সামগ্রীর ওই অনুষ্ঠানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, তিনজন মন্ত্রী গিয়েছেন, সেটা হয়তো চীনের ভালো লাগবে না। সেটা তারা প্রকাশ করবে স্বাভাবিক।

‘আসলে এটা কোন স্বীকৃতিও নয়। হয়তো একটা ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ আছে। তবে আমি মনে করি, সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। কারণ তাইওয়ানকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়ার বিষয় কোন কোন চিন্তাভাবনা এই সরকারের নেই। তবে কোথায় সীমারেখা, সেটা সম্পর্কে হয়তো সম্যক ধারণা নাও থাকতে পারে।’

‘আমরা হয়তো এমন কিছু করে ফেলতে পারি, যেটা তাদের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। সুতরাং এসব ব্যাপারে ভবিষ্যতে আমাদের আরো সতর্ক থাকা দরকার।’ তিনি বলছেন। সূত্র: বিবিসি।