হাত বদলেই বাড়ছে ইলিশের দাম

হাত বদলেই বাড়ছে ইলিশের দাম

ট্রলার থেকে ইলিশ বোঝাই খাঁচা নামানোর আগেই প্রস্তুত আড়তদারের প্রতিনিধিরা। মাঝারি ও বড় আকারের ইলিশের পাশাপাশি আছে জাটকা (৯ ইঞ্চির চেয়ে ছোট) ইলিশও।

আড়তের সামনে নিয়ে এসব মাছ বাছাইয়ের পর ওজন মেপে ঢোকানো হয় আড়তেই। এরপর চলে বরফ দিয়ে সংরক্ষণের প্রস্তুতি।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারি ঘাট ও দক্ষিণ কাট্টলীর রানী রাসমণি ঘাট, আনন্দবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রুপালি ইলিশ বিকিকিনিতে সরগরম পুরো এলাকা। বিভিন্ন আড়ত থেকে ইলিশ বাজারজাত করা হচ্ছে। নির্ধারিত দামে সেসব ইলিশ কিনে নিচ্ছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা। এরপর রওনা হচ্ছেন দূর-দূরান্তে।

ট্রলার মালিক ও জেলেরা জানান, মাঝারি ও বড় আকারের ইলিশ ধরা পড়েছে বেশি। দামও হাতের নাগালে। ঘাটে ট্রলার আসার আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ইলিশের পাশাপাশি লইট্টা, রূপচাঁদা, পোপা, ফাইস্যাসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছও আসছে। প্রতিটি ফিশিং বোটে ৫০ থেকে ২০০ মণ পর্যন্ত ইলিশ আসে। চট্টগ্রামের প্রায় ৭০০ জেলে মাছ আহরণে জড়িত। নতুন ফিশারি ঘাটের ২২০টি আড়ত ও পুরনো ফিশারি ঘাটের ৬৮টি আড়তে যাচ্ছে এসব মাছ।

জানা গেছে, জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনে নেওয়ার পর মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা মণপ্রতি ১শ-২শ টাকা বেশিতে আড়তদারের কাছে বিক্রি করছেন। আড়তদাররা আবার পাইকারিতে বিক্রি করছেন ২শ-৩শ টাকা বেশি দামে। সেই মাছ খুচরা বিক্রেতার হাত বদল হয়ে সাধারণ ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর পর দাম বাড়ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যদিও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন আকারের ইলিশ ক্রেতার কাছে তারা বিক্রি করছেন স্বল্প লাভে।

আড়তদাররা জানান, বর্তমানে ফিশারি ঘাটে প্রতিকেজি ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম ৫০০ টাকা, সাতশ’ থেকে আটশ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এখনও সাগরে কয়েকশ’ ট্রলার আছে। সেগুলো ফিরে এলে দাম আরও কমবে। আড়তে মাছ সংরক্ষণের খরচ ও পরিবহন খরচসহ পাইকারি বিক্রিতে লাভ তেমন নেই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ এর অধ্যাপক ড. রাশেদ উন নবী জানান, লবণাক্ত পানির মাছ ইলিশ ডিম দেয় মিঠা পানিতে। ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আসে এবং ডিম ফুটে গেলে ও বাচ্চা বড় হলে ইলিশ সাগরে ফিরে যায়। ফিরে যাওয়ার পথে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে গত মে মাস থেকে ৬৫ দিন সাগরে ইলিশ আহরণ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে করোনা মহামারিতেও জেলেরা সাগরে যেতে পারেননি। এ কারণে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।

ফিশারি ঘাট সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলী বাংলানিউজকে বলেন, এই সময়ে এক একটি ট্রলারে করে ১৫০ থেকে ২০০ মণ পর্যন্ত মাছ আসছে। ফিশারিঘাট, কাট্টলি ও আনন্দবাজার এলাকার জেলেদের কাছ থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি মণ ইলিশ কেনা হচ্ছে ২০-২২ হাজার টাকায়। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ১৮ হাজার, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ১৪ হাজার টাকা এবং এর চেয়েও ছোট ইলিশ প্রতি মণ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে দাম আরও কমতে পারে।

এমজে/