সেই দুই ভাইসহ পাঁচজনের ৮৮ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ

সেই দুই ভাইসহ পাঁচজনের ৮৮ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ

দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ৫ জনের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তাপস কুমার পাল।

কাফরুল থানায় করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস ওই পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ চেয়ে বৃহস্পতিবারই আবেদন করেন।

ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হোসেন রুবেল, বরকতের স্ত্রী আফরোজা আক্তার পারভীন, রুবেলের স্ত্রী সোহেলী ইমরোজ পুনম এবং আবদুল সাদেক মুকুলের নামে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ৮৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে বলে তদন্তকালে জানা গেছে। এই আসামিদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ না হওয়ায় মামলার তদন্ত বিঘ্ন ঘটছে। যে কারণে এই হিসাবগুলো জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকার সিআইডির মামলা সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এই দুই ভাই দলে অনুপ্রবেশ করে টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকার কাফরুল থানায় গত ২৬ জুন অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে ওই দুই ভাইয়ের নামে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেন।

এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন তারা। এসি, নন–এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার, পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন এই দুই ভাই।

এজাহারে আরও বলা হয়, প্রথম জীবনে এই দুই ভাই রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এক বিএনপি নেতার ফাইফরমাশ খাটতেন। তখন তাদের সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না।

ফরিদপুর এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এলজিইডিতে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয় শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মালিকানায় থাকা রাফিয়া কনস্ট্রাকশন ও এসবি ট্রেডার্স।

গত ২৮ জুন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ফরিদপুরে এসে বিষয়টির সত্যতা পান। মামলায় বরকত-রুবেলের স্বীকারোক্তিতে ফরিদপুরের অনেকের নাম আসে।

এর আগে গত ২৭ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় গত ৭ জুন রাতে বরকত-রুবেলের বদরপুরের বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছে থাকা অস্ত্র, গুলি, বিদেশি মদ, ইয়াবা, এক হাজার ২০০ বস্তা সরকারি চাল ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়। পরবর্তী সময়ে একে একে অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদক, হত্যাসহ এক ডজন মামলা করা হয়। তারা বিভিন্ন মামলায় রিমান্ড শেষে বর্তমানে ফরিদপুর জেলা কারাগারে রয়েছেন।