সৌদি দূতাবাস ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট জমা নিচ্ছে না

সৌদি দূতাবাস ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট জমা নিচ্ছে না

ঢাকার সৌদি দূতাবাস ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া বাংলাদেশী কর্মীদের পাসপোর্ট জমা না নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দূতাবাস থেকে এজেন্সি মালিকদের বলা হয়েছে, ভিসা রিনিউ করা হবে না, আগে ভিসা বাতিল করাতে হবে। আর এই প্রক্রিয়া গেলে প্রত্যেক বিদেশগামী কর্মীকে ভিসা ক্রয়, মেডিক্যাল পরীক্ষা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও বিএমইটির খরচসহ অতিরিক্ত আরো দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হবে, যা কর্মীদের পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

সৌদি আরবের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ীরা নাম না প্রকাশ করে বলছেন, একবার তো প্রতি কর্মীর জন্য তারা প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করেই ফেলেছেন। এখন আবার নতুন করে দেড় লাখ টাকা খরচ (এজেন্সি) করতে হবে তাদের। এতে তারা (এজেন্সিগুলো) নতুনভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই তারা চাচ্ছেন, শুধু পুনরায় মেডিক্যাল পরীক্ষা করেই যাতে শ্রমিকদের সৌদি আরবে পাঠানো যায় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ও ঢাকার সৌদি দূতাবাস প্রধানের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে জনশক্তি প্রেরণকারী একজন ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, গত মার্চ মাসের আগ পর্যন্ত যে ভিসাগুলো স্ট্যাম্পিং করা ছিল, ম্যানপাওয়ারও হয়েছিল; কিন্তু কোভিডের কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আমরা তাদের পাঠাতে পারিনি। সেই ভিসার মেয়াদ এখন শেষ হয়ে গেছে। একজন কর্মীর ভিসার মেয়াদ থাকে তিন মাস। এখন আমরা চাচ্ছি, এসব কর্মীর নতুন করে শুধু মেডিক্যাল করিয়ে দিলেই হবে। এটা হচ্ছে আমাদের বক্তব্য।

কিন্তু অ্যাম্বেসির বক্তব্য হচ্ছে, এই ভিসা আগে কেনসেল করাতে হবে। কেনসেল করানোর পর এই ভিসা কফিলের কাছে ফেরত যাবে। কফিল ভিসার ফি দুই হাজার রিয়াল ফেরত নেবে। এরপর যদি কফিলের লোকের কোনো প্রয়োজন হয় তাহলে সে আবার ফি জমা দিয়ে লোক নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে ভিসার আবেদন করবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার লাইসেন্সে যে ভিসাটা প্রসেসিং করতে পারব সেটাকে আমরা ওকালা বলে থাকি। এটি করতে ওই দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিকে আমার ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। মেডিক্যাল করাতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করাতে আড়াই হাজার টাকা। এ ছাড়া জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ফি, ভিসা ফি ২২ ডলারসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এ ছাড়া ভিসা তো বিভিন্ন জনে বিভিন্ন দামে কেনে। সেই হিসাবে একটি ভিসার দাম পাঁচ হাজার রিয়াল। সেই হিসাবে এক লাখ টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে আমাদের একজন শ্রমিকের ভিসা প্রসেসিং বাবদ দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। যেটি আমরা গত মার্চ মাসেই করেছি। এখন আপনাদের দাবি কি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেসব ভিসার মেয়াদ এক্সপেয়ার হয়ে গেছে সেগুলোকে সাশ্রয় মূল্যে শুধু মেডিক্যাল করে নতুন করে অ্যাম্বেসি যেনো ভিসা রিনিউ করে দেয়।

পাসপোর্ট কি অ্যাম্বেসিতে জমা দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অ্যাম্বেসি পাসপোর্ট বই জমাই নিচ্ছে না। বলছে তোমার বই নতুন করে প্রসেস করো। নতুন করে আবার ভিসা প্রসেস করতে গেলে তাহলে আমাদের প্রতি কর্মীর জন্য দেড় লাখ টাকা খরচ হবে। আর এই টাকা কিন্তু কর্মীর পকেট থেকেই যাবে। প্রসেসিং হওয়া এমন ২০০ ভিসা আমার কাছে এখন রয়েছে। বায়রা বলেছিল, তাদের কাছে ৮৫ হাজার এমন ভিসা রয়েছে। এর মধ্যে সৌদিগামী বেশি। এর আগে মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ঢাকায় আটকে থাকা সব শ্রমিকরাই সৌদি আরবে যেতে পারবে। কিন্তু সেই জটিলতার সমাধান কিন্তু এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এ নিয়ে টেনশনে আছি। শুনতেছি আজকালের মধ্যে নতুুন কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেটির অপেক্ষায় আছি।

এমজে/