পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় আসকের গভীর উদ্বেগ, তদন্ত দাবি

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় আসকের গভীর উদ্বেগ, তদন্ত দাবি

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর রেশ না কাটতেই ১৩ অক্টোবর ঢাকার নবাবগঞ্জ থানা হাজতে মামুন মিয়া নামের আরেক অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়েছে। গত ক’দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। বুধবার (১৪ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও তদন্ত দাবি করে সংগঠনটি।

আসকের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১১ অক্টোবর সকালে নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলার খ্রিস্টানপল্লির বাঁশঝাড় থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, পরদিন ১২ অক্টোবর ওই নারীর স্বজনরা অটোরিকশা চালক মামুনকে সন্দেহভাজন হিসেবে মারধর করে শ্রীনগর থানায় সোপর্দ করে। ১৩ অক্টোবর সকালে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে আসামিকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থানা পুলিশ তাকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই ফাঁকে আসামি মামুনকে তার পরিহিত লুঙ্গি দিয়ে হাজতখানার ভেতর টয়লেটের জানালার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখে পুলিশ। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

বিবৃতিতে জানানো হয়, পুলিশ হেফাজতে মামুনের মৃত্যুর বিষয়ে আসকের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশ গত ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় মামুনকে আটক করলেও ১৩ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত তাকে আদালতে পাঠানো হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে নবাবগঞ্জ থানা হাজতের সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ দেখানো হয়, যেখানে মামুনকে বাথরুমে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু ওই ফুটেজের সম্পূর্ণ অংশ দেখতে চাইলে পুলিশ তা দেখায়নি। এছাড়া ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে গেলেও তাদের মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। এসব কারণে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মামুনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।

হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আসক বলে, গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর পল্টন ও নবাবগঞ্জ থানা, সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া থানা হেফাজতে চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আসক মনে করে, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো ঘটনা নিরসনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা দরকার।