টিসিবির পণ্যের জন্য হাহাকার!

টিসিবির পণ্যের জন্য হাহাকার!

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সীমানা প্রাচীরের উত্তরপূর্ব দিকে সচিবালয়ের সামনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন মিরপুরের গৃহবধু রিনা বেগম। অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডাল ও চিনি কিনতে সকাল ৭টায় তিনি মিরপুর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন। টিসিবির ট্রাক এলে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে। তাই লাইনে দাঁড়ানোর জন্য একবার সচিবালয়ের দক্ষিণ গেটে আরেকবার উত্তর গেটে আসা-যাওয়া করতে থাকেন তিনি। কিন্তু ট্রাক আর আসে না।

তিনি যখন দক্ষিণ গেটে তখন শুনতে পান ট্রাক এসেছে। সামান্য পথ হেঁটে এসে দেখেন বিশাল লম্বা লাইন। সকাল ৭টায় এসেও ৬২০ টাকার প্যাকেজ (পাঁচ লিটার তেল, তিন কেজি পেঁয়াজ, চিনি এক কেজি, এক কেজি ডাল ও এক কেজি আলু) কিনে যখন হাতে পান, তখন সাড়ে ১১টা বেজে গেছে।

স্বামী ও তিন সন্তানসহ রিনা বেগমের সংসারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো চাকরি করেন। স্বামীর একার আয়ে সংসার আর চলে না মন্তব্য করে রিনা বেগম বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম, খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে।

রিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য টিসিবির ট্রাকের পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে পণ্য চাইলেন। এতে লাইন দাঁড়ানো শতাধিক মানুষ চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন।

আলেয়া বেগম নামের মধ্যবয়সী এক নারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই সদস্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আইনের লোক তো কি হয়েছে। লাইন ভেঙে আসলেন কেন? ওই সদস্য বাজে একটা মন্তব্য করতেই মহিলারা একজোট হয়ে তেড়ে গেলেন।

দেখা গেল, টিসিবির পণ্য নিতে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মহামারি করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের পরামর্শ দেয়া হলেও টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো নারী, পুরুষ ও শিশুরা বলতে গেলে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। রোদের তেজের কারণে অনেকে ঘর্মাক্ত।

ট্রাকের ওপর কয়েকজন শ্রমিক বস্তা থেকে বিভিন্ন পণ্য বের করে সেগুলো প্যাকেটে ভরছেন। তাদের দম ফেলার সুযোগ নেই। অনেকে লাইন ভেঙে মালামাল কেনার চেষ্টা করছেন। আর ট্রাক থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ‘লাইন ভেঙে আপনাদেরকে মালামাল দিলে মাইর খাইতো হইবো। কষ্ট করে লাইনে দাঁড়ান।’

ধানমন্ডি শংকর থেকে এসেছেন গৃহবধূ শাহানারা বেগম। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে প্যাকেজ বুঝে নিলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওই এলাকায় টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক নিয়মিত যায় না। তাই এখানে এসেছেন। টিসিবির পণ্য তার মতো গরিবদের কোনোভাবে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সাহায্য করছে বলে মন্তব্য করেন।

টিসিবির ট্রাক থেকে যিনি ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছিলেন তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, প্রতিদিন ট্রাকে করে দুই হাজার ১০০ কেজি পণ্য বিক্রি করা হয়।

‘প্যাকেজ ছাড়া খুচরা বিক্রি কেন করা হচ্ছে না’-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্যাকেজে মাল বিক্রি কইরাইতো দম ফেলার ফুসরত পাই না, খুচরা বেচুম কখন।’

এমজে/