বিচার বিভাগ পৃথকের ১৩ বছরেও হয়নি পৃথক সচিবালয়

বিচার বিভাগ পৃথকের ১৩ বছরেও হয়নি পৃথক সচিবালয়

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ১৩ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এখনো বিচার বিভাগ পৃথকের প্রকৃত সুফল পাচ্ছেন না বিচারপ্রার্থীরা।

আইনবিদরা বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ থেকে বিচারকরা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। সেই বাস্তবতায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সুফল পেতে আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয়। আর নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে হতে হবে। তবেই যে বিচার বিভাগ পৃথক দেখছি তার সুফল আসবে।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা সংক্রান্ত মাসদার হোসেন বনাম সরকার মামলার রায় দেন। রায়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে ৩০১ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়ে স্বাধীন বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে ১০৯ জন বিচারপতি কর্মরত। এর মধ্যে আপিল বিভাগে সাতজন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ১০২ জন বিচারপতি রয়েছেন। নি¤œ আদালতে কর্মরত আছেন এক হাজার ৮০১ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ আলাদা করার সময় দেশের সব আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার। বর্তমানে সেই মামলার জট এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় প্রায় ৩৫ লাখ। আইনবিদদের মতে, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সুফল পেতে আরো বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। অবকাঠামোসহ বিচারকদের এজলাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট দিতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ১৩ বছর চলে গেছে। এই সময়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের যে উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ থেকে নিম্ন আদালতের বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। সেই বাস্তবতায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন নিম্ন আদালতের পদোন্নতি, শৃঙ্খলা আইন মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন দেন। সুপ্রিম কোর্টের যেহেতু পৃথক কোনো সচিবালয় নেই। আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয়। এটা না দেয়া পর্যন্ত নি¤œ আদালতের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ থাকবে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, আমাদের বিচারকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বিচার বিভাগের অবকাঠামো বৃদ্ধি করা দরকার। এজলাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ জন্য বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট দিতে হবে। নিম্ন আদালতের চাপ মুক্তি করতে হলে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় দিতে হবে। নিম্ন আদালতের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দিতে হবে। তবেই যে বিচার বিভাগ পৃথক দেখছি তার সুফল আসবে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন বলেন, পৃথক সচিবালয় হলেই বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে তা তো নয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আছেন। রেজিস্ট্রার জেনারেল অনেকটা সচিবের মতোই কাজ করছেন। নামটা অন্যভাবে দেয়া হয়েছে, উনি কাজ করেন সচিবের মতো। উনাদের তো সচিবালয় আছে। রেজিস্ট্রার জেনারেলের যে কার্যালয় সেটা সচিবালয়ের কাজই করে। এখান থেকেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, দেখাশোনা করে।

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, শৃঙ্খলার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট এটাকে পুরো রাখতে পারে, নাও রাখতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণ স্বাধীন এখানে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা এসেছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা ছিল, বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করতে হবে। সেটা হয়ে গেছে। ফলে একটা সন্তোষজনক অগ্রগতি এরই মধ্যে সাধিত হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বাকি যে নির্দেশনাগুলো ছিল, সেগুলোতে অগ্রগতি হয়নি। একটিমাত্র নির্দেশনা ছাড়া বাকিগুলো আজো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সেই দৃষ্টিতে ভাবলে কিছুটা হতাশা থাকলেও আমি আশাবাদী যে বিচার বিভাগের রায় পুরোপুরি কার্যকর হবে।সূত্র : নয়া দিগন্ত

এমজে/