দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বিউবোর মুনাফা!

দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বিউবোর মুনাফা!

দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে অবশেষে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) গত অর্থবছরে ‘লাভের’ মুখ দেখেছে। অন্তত পক্ষে সরকারি পরিসংখ্যানে তাই তুলে ধরা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের করা এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই মুনাফা আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। তবে দীর্ঘদিনের শীর্ষ লোকসানি প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’ গত অর্থবছরে ১০১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রতিষ্ঠানটি ১৪৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল।

তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানকে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি আকারে প্রদান করে আসছে। ফলে গত ১২ বছরে এই প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করা হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি দেয়া হয় সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি হিসেবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ (বিসিআইসি)-এর লোকসান বেড়েছে এবং লোকসান দিয়েছে মুনাফা অর্জনকারী ‘ঢাকা ওয়াসা’ও। গত অর্থবছরে বিসিআইসি ৭২৬ কোটি ৯ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ৫৭৪.৬৩ কোটি টাকা) এবং ঢাকা ওয়াসা ২৯৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে (এর আগের অর্থবছরে ৩৯৬.৭৩ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছিল)।

অন্যান্যের মধ্যে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন’ এক হাজার ৬১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা; ‘বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন’ ৭৪১ কোটি ১৯ লাখ টাকা; বিআরটিসি ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা; বিএসটিআই ২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও বিটিএমসি ২১ কোটি ৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।

অন্য দিকে, গত অর্থবছরে মুনফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন’ (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর মুনাফা করেছে- ৪ হাজার ৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে লোকসান ছিল ৪,৭৬৮.৪২ কোটি টাকা)।

একইভাবে ‘বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন’ (বিটিআরসি) ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ২,৭৫৭.৬১ কোটি টাকা); ‘সিভিল এভিয়েশন অথরিটি’ (সিএএ) ৫৩৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ৮৪০.০৬ কোটি টাকা) ও রাজউক ২৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ৫০১ কোটি টাকা) মুনাফা অর্জন করেছে।

অন্য দিকে গত বছর বেশ যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বেড়েছে, সেগুলোর মধ্যে ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড’ (আরইবি) ৮৬৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ৬৬৭.১৫ কোটি টাকা); পেট্রোবাংলা ৮৫৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ৭৬৯.৯৮ কোটি টাকা); ‘বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন’ (বিএসইসি) ৮১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা (এর আগের অর্থবছরে ৩৯.৮৯ কোটি টাকা) মুনাফা অর্জন করেছে।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে লাভ-লোকসান মিলিয়ে ৪৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিট মুনাফা ৩ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা কমেছে। আলোচ্য বছরে ৩৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নিট মুনাফা অর্জন করেছে ১১ হাজার ১৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

অন্য দিকে ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নিট লোকসান দিয়েছে ৩ হাজার ৬২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। লাভ-লোকসান মিলিয়ে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) লাভ-লোকসান মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে ৪০টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মোট ১৩ হাজার ২০৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছিল এবং আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মোট নিট লোকসান দিয়েছিল দুই হাজার ৫২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এমজে/