আবরারের লাশ দোতলা থেকে নামাতে বলেছিলেন রাসেল

আবরারের লাশ দোতলা থেকে নামাতে বলেছিলেন রাসেল

হলের দোতলায় সিঁড়ির কাছে তোশকের ওপর আবরার ফাহাদকে নিথর পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। পরে বুয়েটের চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর এক ছাত্রসহ সেখানে আসেন মেহেদী হাসান রাসেল। রাসেল তখন ওই ছাত্রকে আবরারের লাশ নিচে নামাতে বলেছিলেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা বলেছেন ওয়াহিদুর রহমান রাফসান। তিনি বুয়েটের ১৫তম ব্যাচের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র। এ নিয়ে তিনিসহ এই মামলায় ২৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ছাত্র ওয়াহিদুর রহমান তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি হলের বাইরে ছিলেন। এরপর তিনি হলে ফিরে এসে পড়তে বসেন। তখন তাঁর রুমমেট তাজওয়ার বখতিয়ার জাহিদ বাইরে থেকে এসে তাঁকে বলেন, ২০১১ নম্বর (আবরারকে এই কক্ষে পেটানো হয়) কক্ষের সামনে তিনি অনেকগুলো স্যান্ডেল দেখে এসেছেন। এর কিছুক্ষণ পর মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম (আসামি) তাঁর কক্ষে আসেন। কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি। রাত দেড়টার দিকে তিনি, আনসারী ও রেদোয়ান আফরোজ বুয়েটের তিতুমীর হলের সামনে পরোটা খেতে যান। রাত দুইটার দিকে আবার তিনি কক্ষে ফিরে আসেন। তখন দেখেন, তাঁর কক্ষে মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম বসে আছেন। তাঁকে খুব বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। তখন তাঁর কাছে কী হয়েছে জানতে চান। কিন্তু মোরশেদ তাঁকে কোনো কিছুই বলেননি।

ওয়াহিদুর রহমান আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর রুমমেট বখতিয়ার জাহিদ তাঁকে জানান, ২০১১ নম্বর কক্ষে একটা ছেলেকে বেশ পেটানো হয়েছে। এ সময় তাঁকে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন বখতিয়ার। পরে তিনি কক্ষের পেছনের বারান্দায় গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন কী হয়েছে। তখন সিঁড়ির কাছে জটলা দেখেন। পরে তিনি হলের দোতলায় সিঁড়ির কাছে যান। দেখেন, সেখানে আবরার ফাহাদ নিথর হয়ে তোশকের ওপর শুয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে বুয়েটের চিকিৎসক মাসুক এলাহী আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি বলেন, আবরার কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন। পরে সেখানে আসেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও আরেক ছাত্র। রাসেল তখন ওই ছাত্রকে আবরারের লাশ নিচে নামাতে বলেন। তখন তিনি (ওয়াহিদুর) নিজের কক্ষে চলে যান।

ওয়াহিদুর রহমান আরও বলেন, পরে তিনি, তাজওয়ার ও রেদওয়ান বুয়েটের আহসানুল্লাহ হলে যান। সেখানে কয়েকজন ছাত্রকে আবরারের মৃত্যুর খবর জানান। এরপর সেখান থেকে আবার হলে ফিরে আসেন। পরে তিনিসহ কয়েকজন বুয়েটের ক্যাম্পাসে যান। সেখানে বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। তাঁদেরও আবরারের মৃত্যুর খবরটি জানান। পরে তিনিসহ অন্যরা হলে ফিরে আসেন। হলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) কন্ট্রোল রুমের সামনে অবস্থান নেন, যাতে অপরাধীরা সিসিটিভির ফুটেজ নষ্ট না করতে পারেন। পরে তিনি জানতে পারেন, আবরার ফাহাদকে তাঁর ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে আসামি অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রাসেল, মেফতাউল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারফ সকাল, সরকার মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাখখারুল, মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তানভীর, তানিমসহ অন্যরা ক্রিকেটের স্টাম্প এবং স্কিপিং রোপ দিয়ে পিটিয়ে ও কিল-ঘুষি দিয়ে মেরে ফেলেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, আবদুস সোবহান তরফদার, প্রশান্ত কর্মকার, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল গণি, রেজাউল ইসলাম, আজিজুর রহমান প্রমুখ।

গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২ সেপ্টেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।