‘ট্রাম্পের প্রভাব এখনই যাচ্ছে না, দরজাটা বন্ধ হয়েছে তবে জানালাটা খোলা আছে’

‘ট্রাম্পের প্রভাব এখনই যাচ্ছে না, দরজাটা বন্ধ হয়েছে তবে জানালাটা খোলা আছে’

আদালতের চ্যালেঞ্জ খারিজ হওয়ার পর আর কোনো বাধা বাইডেনের নেই । অন্তত পক্ষে আর কোনো লক্ষণ নেই। দরজাটা বন্ধ হয়েছে তবে জানালাটা খোলা আছে। কিন্তু সেটা দিয়ে খুব সুবিধার জায়গায় যেতে পারবেন মিস্টার ট্রাম্প তা মনে হয় না। গ্রিন চ্যানেলে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে নির্বাচনে ট্রাম্পের হেরে যাওয়া ও বাইডেনের শপথ নেয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির ব্যাখ্যায় এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ডিস্টিংগুইসড প্রফেসর আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, এখনও কিছু বাধা আছে। বড় ইতিবাচক ঘটনা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট পেনসিলভ্যানিয়ার নির্বাচন সংক্রান্ত যে আর্জিটা ছিল সেটা খারিজ করে দিয়েছে। তাতে করে এক অর্থে বলতে পারেন সুপ্রিম কোর্টের দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। জানালা কি খোলা থাকলো, থাকতে পারে।

টেক্সাসের কোর্টে একটা আবেদন করা হয়েছে। আমার মনে হয় না সেটা গ্রহণযোগ্য। উনি যে মামলাটা করেছেন সেটা আসলে অন্য অঙ্গরাজ্য নিয়ে। এদিক থেকে আপনি বলতে পারেন আইনগত যে বাধা-বিপত্তি তৈরি করা হয়েছে সেগুলো গেছে। কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলো থেকে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রিপাবলিকান দলের যেসব সদস্য কংগ্রেসে আছেন তাদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক বলছেন তারা বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট বলে মনে করেন। অন্যরা বলছেন না। তাদের বলায় কিছু আসে যায় না। কিন্তু ক্যাবিনেট তৈরি করতে হলে ক্যাবিনেটের সদস্যদের সিনেট কমিটির শুনানি হবে, তখন গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে ফ্লোরে যাবে। এখন পর্যন্ত সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হচ্ছে রিপাবলিকান দলের। তারা ওই জায়গায় একটা বিপত্তি তৈরি করতে পারেন। এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তা হলো ৫০ জন রিপাবলিকান আর ৪৮ জন ড্যামোক্রেট। এখন দুটি সিট বাকি আছে জর্জিয়াতে। এ দুটো যদি ডেমোক্রেটরা জিতে তাহলে ৫০-৫০ একশ হবে। কিন্তু সিনেট যিনি প্রিজাইড করেন তিনি হচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তখন আসলে ডেমোক্রেটদের জন্য ক্যাবিনেট গঠন করা সহজ হয়ে যাবে। যদি সেটা না হয়, ধরুন জর্জিয়াতে একটা সিট ডেমোক্রেটরা পান আর একটা রিপাবলিকরা পান তাহলে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠাতা থেকে যাচ্ছে এবং আমি যেটা আশঙ্কা করছি তা হলো রিপাবলিকান কমিটি ও রিপাবলিকান সিনেট সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যে, ক্যাবিনেট তৈরি করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া। তারা এটা বলবে, এই প্রার্থী গ্রহণযোগ্য নয়, তুমি আমাদের সঙ্গে আলাপ করে একটা প্রার্থী দাও। এই আলাপ আলোচনার মানেই হচ্ছে তাদের যে এজেন্ডা এবং বাইডেনের যে এজেন্ডা তার মাঝামাঝি কোথাও আসতে হবে। দরকষাকষিতে যেতে হবে। ধরুণ একটা বিলের ক্ষেত্রে দরকষাকষিতে যেতে পারবেন। কিন্তু এ ধরণের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দরকষাকষি করবেন, যেটা আপনার এজেন্ডা পুরোপুরি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। এটা থেকে যাচ্ছে একটা বড় রকমের চ্যালেঞ্জ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে। কিন্তু সেটা নির্ভর করবে জর্জিয়ার উপর। জর্জিয়ার দুটো সিটের উপর বাইডেনের পুরো প্রেসিডেন্সির বিশেষত ক্যাবিনেটের ফরমুলেশনের ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। জর্জিয়াতে যারা আছেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ ভোট দিন। ভোট দিয়ে নিশ্চিত করুন যাতে এমন পরিস্থিতি না হয় যে, বাইডেনের প্রশাসনকে এরকম একটা ভীতজনক অবস্থায় ফেলবে। জর্জিয়ার সিনেটের ভোট আগামী ৫ই জানুয়ারি।

এদিন ভোটে দুটো সিটই যদি ডেমোক্রেটরা না পায় তাহলে রিপাবলিকানরা কি কোনো অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে পারে এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে। কিন্তু আরো কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে তাহলো এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তাতে করে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকানদের সহযোগিতা পাওয়া খুব দুরুহ। এখন যদি সেটা অব্যাহত থাকে বাইডেনের জন্য কতগুলো জিনিস করতেই হবে। এগুলো মধ্যে একটা হচ্ছে ইকোনোমির যে পরিস্থিতি রিভাইটেলাইজেশনের জন্য একটা বিল তৈরি করতে হবে। একেবারে নিজের দলের জন্য বিল পাস করানো খুব বিপদজনক। কারণ, একটা হচ্ছে সিনেট তার হাতে না থাকে তাহলে পাস করানো খুবই দুরুহ। প্রায় অসম্ভব। আর যদি হাতেও থাকে তাতেও রিপাবলিকানদের সমর্থন ছাড়া এ ধরণের একটা বিল পাস করাবেন সেটা কতটা সহজ হবে কতটা বাস্তবোচিত হবে সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

কিছুদিন ধরেই ট্রাম্প কয়েকটি স্টেটের স্টেট লেজিসলেটরে হেয়ারিংয়ে আনার চেষ্টা করছেন এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে সম্ভাবনা নেই। শেষ চেষ্টা পর্যন্ত হয়তো মিস্টার ট্রাম্প চালাবেন। কিন্তু স্টেট লেজিসলেটররা যদি পপুলার ভোটের যে স্লেইট সেটা বাদ দিয়ে যদি ইলেক্টোরাল তৈরি করতে যায় তাহলে বড় রকমের সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে দেশ। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে পরিমান ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে এগিয়ে আছে তাহলে একটা নয় একাধিক স্টেটে এরকম পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। একাধিক স্টেট লেজিসলেটররা এরকম পরিস্থিতিতে যাবেন তা আমার মনে হয় না। এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয় আছে, ট্রাম্পের সঙ্গে রিপাবলিকান দলের শীর্ষ পর্যায়ের এবং কংগ্রেসের লোকজন যতটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন, স্টেট লেভেলে সেটা করছে না। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখুন, জর্জিয়াতে সরকারে কিন্তু প্রত্যেকে রিপাবলিকান। তারা কিন্তু নিয়ম কানুন মেনে যা করার তার বাইরে এক চুল নড়েনি।

হাউজে ও সিনেটে ভিন্ন চিত্র রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অখুশি হবেন এমন চিন্তায় অনেক কংগ্রেস ম্যান, ওমেন কথা বলছেন না। এ প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, একটা বড় অংশ এমনটাই করছেন। তার একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশেষ করে হাউজে তো দুবছর পরে নির্বাচন এবং এটা আমরা প্রায় নিশ্চিত করে বলতে পারি। আমেরিকান সিস্টেমের উপর থেকে ট্রাম্পের প্রভাব এখনই যাচ্ছে না।

অন্য প্রেসিডেন্টরা যে নিয়মনীতি অনুসরণ করে, নরমালি এগুলোতো আর লিখিত কোনো নিয়ম না। পরাজিত হওয়ার পর আসলে প্রেসিডেন্টরা ব্যাক স্টেজে চলে যান। এখন আর আমার দায়িত্ব নেই। এমনকি দুই টার্মের পরও প্রেসিডেন্টরা দলের এই নিত্যনৈমত্তিক খুুটিনাটি বিষয়ে যুক্ত হন না। কিন্তু মিস্টার ট্রাম্প সে পথে হাঁটছেন না। এমনকি শোনা যাচ্ছে জানুয়ারির কুড়ি তারিখে বাইডেন যে শপথ নেবেন ঠিক একই সময়ে মিস্টার ট্রাম্প ফ্লোরিডাতে একটি জনসভা করবেন। যাতে করে সকলের দৃষ্টি ওদিকে চলে যায়। এটা শুধু নজিরবিহীন নয়, অকল্পনীয় ঘটনা। ইতোমধ্যেই আমরা জানি মিস্টার ট্রাম্প একটা পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি তৈরি করে টাকা তুলতে শুরু করেছেন এবং প্রায় দুইশ মিলিয়ন ডলারের মতো তুলেছেন। এই টাকার একটা বড় অংশ যাবে তার কাজে। আর সামান্য অংশ যাবে রিপাবলিকান পার্টির ফান্ডে। ট্রাম্প এই অর্থটা ব্যয় করবেন তার নির্বাচনী প্রচার অভিযানে। আমার অনুমান তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হবেন। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই চারবছর তিনি ঘন ঘন জনসভা করবেন। টেলিভিশনে কথা বলবেন। এবং এটাও শোনা যাচ্ছে, তিনি একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু করবেন। কারণ তিনি ফক্স-এর উপর অত্যন্ত বিরক্ত। আমি খুব অবাক হবো না যদি ট্রাম্প একটি টেলিভিশন কিনে ফেলেন।

পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট থাকার পর একবার নির্বাচনে হেরে পরের বার আবার প্রার্থী হতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, এতে কোনো বাধা নেই। আমার যা অনুমান, ট্রাম্পের রাজনীতির লক্ষ্য এখন দুটো। প্রথমটা ২০২৪ এর ভোট নয়। ২০২২। মিডটার্ম ইলেকশন। এসময় হাউজে তার লোকজনকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবেন। এই যে এখন হাউজের লোকজন কিছু বলছেন না তাদের ভীতিটা হচ্ছে ওই জায়গাটা।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, চাপটা দুইভাবে তৈরি করবেন ট্রাম্প। একটা হচ্ছে তিনি দলের লোকজনকে উজ্জীবিত করবেন। সাধারণত আমরা যেটা দেখতে পাই নির্বাচনের পর বছর দেড়েক ধরে পার্টি চুপচাপ থাকে। কিন্তু ট্রাম্প সেটা করছেন না। আরেকটা হচ্ছে যারা হাউজের এখনই সমর্থক আছে অথবা সমর্থক নেই কিন্তু ভালনারেবল, যারা মনে করে দলের মধ্যে দৃঢ় সমর্থন আছে যেকোনো সময় মোকাবেলা করতে হবে তারা করবেন যদি ভালনারেবল হয় তাহলে এই রকম বিপদের মধ্যে না পড়াই ভালো। ফলে দুই রকম চাপই তৈরি হবে। আমি মিস্টার ট্রাম্পকে কি বলি জানেন? টক্সিক ক্যারিশমা।

আলী রীয়াজ বলেন, এবারের নির্বাচনে একটা বড় জিনিস লক্ষ্য করা গেছে। সেটা হচ্ছে ডিটারমাইনিং ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে এডুকেশন। তুলনামূলকভাবে যারা শিক্ষিত তারা ডেমোক্রেট। এর মধ্যে বড় একটা চেঞ্জ এসেছে। কিন্তু এর মধ্যে টক্সিক ক্যারিশমা। ফলে তার পক্ষে ম্যানিপুলেশনটা খুব সহজ হয়ে যাচ্ছে।

এমজে/