শেখ মুজিবের ভাস্কর্য

আমলাদের নজিরবিহীন দলীয় সমাবেশ

আমলাদের নজিরবিহীন দলীয় সমাবেশ

সরকারী চাকুরীর রীতিনীতি ভঙ্গ করে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা নজিরিবহীনভাবে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশে সূচনার পর থেকে আমলাদের এমন দলীয় সমাবেশে যোগ দেবার ঘটনা নজিরবিহীন।

চট্টগ্রামে মানববন্ধন করেছেন একশরও বেশি বিচারক। রাজধানীর বাইরে প্রায় সব জায়গাতেই সরকারি কর্মকর্তারা একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে।

সরকারি আমলাদের নজিরবিহীন এসব সমাবেশ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর প্রধান বেনজির আহমেদ বলেছেন তার ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ওপর হামলা মানে দেশের ওপর হামলা তাই সেরকম কিছু হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বিসিএসের সব ক্যাডারদের -সরকারি কর্মকর্তা ফোরাম- সমাবেশের আয়োজন করে যাতে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস।

মিস্টার কায়কাউস তার বক্তৃতায় বলেন, "আমরা উনত্রিশটি ক্যাডার সার্ভিসের সবাই আজ অঙ্গীকার করছি যে জাতির পিতার অসম্মান আমরা হতে দিবোনা। জয় বাংলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান। আমরা সবাই কেন বক্তৃতার শেষে জয় বাংলা বলবোনা। আশা করি আজ থেকেই শুরু করবো এবং প্রয়োজনে সরকারের অনুমতি নিবো"।

এতে পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদসহ বিসিএস এর সবগুলোর ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবরাসহ প্রায় সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছেন।

এমন সময় তারা এই প্রতিবাদ করছেন, যখন একদিন আগেই খবর বেরিয়েছে, ভাস্কর্যের বিরোধীতাকারী বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাদের সাথে একটি সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে সরকার।

সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদ বলেন, "স্বাধীনতা, সংবিধান, রাষ্ট্র ও জাতির জনক- নো বডি ক্যান টাচ দেম"।

"আমরা তাদের মোকাবেলা করবো। বঙ্গবন্ধু দেশ, পতাকা, মানচিত্র দিয়েছেন। তার ওপর হামলা সংবিধানের ও রাষ্ট্রের ওপর হামলা। রাষ্ট্র অবশ্যই বিধিবিধান অনুযায়ী কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবে"।

বিসিএস অডিট ও অ্যাকাউন্টস এসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম সারোয়ার ভুঁইয়া বলেন, "জাতির পিতাকে যারা অসম্মান করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করছি"।

বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফজলে হায়াত কায়সার বলেন, "বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতোনা, আর বাংলাদেশ না হলে এত ক্যাডার সার্ভিস হতোনা। ভাস্কর্য যারা ভেঙ্গেছে তারা দেশবিরোধী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি"।

বিসিএস শুষ্ক ও আবগারি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাস্টমস কমিশনার বলেন, "এখনো এ দেশে কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে যারা জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা করছেন। ভাস্কর্য ভাঙ্গার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি"।

বিসিএস তথ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, "স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা থাকবে তাদের বিপক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের কণ্ঠ সোচ্চার থাকবে"।

"ভাস্কর্য মোটেও ধর্মীয় বিষয় নয়, এটি শিল্পকর্মের অংশ। বাংলাদেশ এটি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এতো কথা কেন। এটি হলো রাজনীতি। কর্মকর্তাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে অবস্থান থাকতে হবে"।

বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের পক্ষে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, "যারা বাংলাদেশের চাকা পেছনে নিতে চায় সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে বেছে নিয়েছে"।

"তারা রাতের অন্ধকারে ভাস্কর্য ভেঙ্গেছে । আমরা এটাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারিনা"।

বিসিএস সড়ক ও জনপথে প্রকৌশলী সমিতি, বিসিএস টেলিকম সমিতি, বিসিএস কৃষি ক্যাডার, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সহ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে বিসিএস কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।