চমেক হাসপাতালে কোটি টাকার ‘এমআরআই’ মেশিন ৩ বছরেই অচল

চমেক হাসপাতালে কোটি টাকার ‘এমআরআই’ মেশিন ৩ বছরেই অচল

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে স্থাপন করা প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের এমআরআই মেশিন তিন বছর যেতে না যেতেই অচল হয়ে পড়েছে। ফলে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়ছে খরচও। রোগীর স্বজনরা বলছেন, যে এমআরআই পরীক্ষা চমেক হাসপাতালে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় করা যায় তা বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে।

কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি থাকা মো. ওসমান নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, গত কয়েকদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত বাবাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসক এমআরআই করানোর পরামর্শ দেন। প্রথমে হাসপাতালে করানো যায় কিনা খোঁজ নিই। পরে শুনলাম এখানে মেশিন নষ্ট। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে অতিরিক্ত ফি দিয়ে এই পরীক্ষা করানো হয়।

খাদিজা বেগম নামে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, সাধারণ রোগীদের শেষ ভরসা এই হাসপাতাল। অথচ হাসপাতালে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। যাদের টাকা আছে তারা হয়তো বাইরে টেস্ট করাতে পারে। কিন্তু যাদের টাকা নেই তারা কি টেস্ট করাতে পারবে না?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে ‘হিটাচি ১.৫ টেসলা’ মডেলের জাপানি এই মেশিনটি। এটি স্থাপনের পর গত ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে চালু করা হয়। চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর হঠাৎ যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় রোগীদের সেবা কার্যক্রম। গত ২৯ অক্টোবর হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

হাসপাতাল পরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে (নিমিইউ অ্যান্ড টিসি) যোগাযোগ করেন। এমআরআই মেশিনটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রাংশ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেরামত করতে প্রায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন, যা ‘নিমিইউ অ্যান্ড টিসি’ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অসম্ভব। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রতিদিনই এই এমআরআই মেশিনে ১৫ থেকে ২০ জন রোগীর পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু কোটি টাকা মূল্যের মেশিনটি এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হলে অন্যান্য যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার বলেন, অচল এমআরআই মেশিনটি সচল করতে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন। যা ‘নিমিইউ অ্যান্ড টিসি’ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা অর্থ ছাড় করলে মেরামত করা যাবে মেশিনটি। আমরাও চেষ্টা করছি কিভাবে দ্রুত মেশিনটি চালু করা যায়। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা রোগীদের আবার সেবা দিতে পারবো।

নষ্ট এমআরআই মেশিন সচল করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, মেশিনটি মেরামতের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছি। তারা একবার দেখে গেছেন। যেহেতু মেশিনটি ব্যয়বহুল এবং এর যন্ত্রপাতিও খুবই দামী, ফলে তা মেরামত করতে মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন। ‘নিমিইউ অ্যান্ড টিসি’ থেকে অর্থ সহায়তা পেলে আমরা মেশিনটি মেরামত করে সেবাদানের উপযোগী করে তুলতে পারবো।

প্রসঙ্গত, এমআরআই (ম্যাগনেটিক রিজনেন্স ইমেজিং) আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা খুঁজে বের করতে মানব শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের খুব স্পষ্ট ছবি নেওয়া হয়। মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, জয়েন্ট (যেমন হাঁটু, কাঁধ, কব্জি ও গোড়ালি), পেট, স্তন, রক্তনালী, হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য অংশের পরীক্ষার জন্য এমআরআই ব্যবহার করা হয়।

এমজে/