পার্বত্য চট্টগ্রামে বিলুপ্তপ্রায় ১৮৫ প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিলুপ্তপ্রায় ১৮৫ প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিলুপ্তির পথে রয়েছে ১৮৫ প্রজাতির মাতৃবৃক্ষ ও উদ্ভিদ। এসব প্রজাতি রক্ষায় ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গত দুই বছরে ৩৬ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন মাতৃবৃক্ষ ও উদ্ভিদের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাকিগুলো সংরক্ষণ করে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম। গবেষণার মাধ্যমে মাতৃবৃক্ষ ও বিপন্ন উদ্ভিদ রক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত এবং অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় থাকবে বলে মত পরিবেশবাদীদের।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জনসংখ্যার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব। যুগ যুগ ধরে জুম চাষ ও জঙ্গল পরিষ্কারের নামে আগুন দিয়ে পাহাড় ন্যাড়া করা, বসতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন, গাছপালা কেটে ফেলা, ইটভাটার জন্য পাহাড় কেটে মাটি ও লাকড়ি হিসেবে গাছপালা সাবাড় করায় বিলুপ্তির পথে শত শত প্রজাতির মাতৃবৃক্ষ। বিপন্ন এসব উদ্ভিদ রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ৪৩ একর ভূমি নিয়ে বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও গবেষণার লক্ষ্যে জার্মপ্লাজম সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বসতবাড়ি নির্মাণ, জুমচাষ, একক সেগুন, আম, আনারসসহ নানা বাগান গড়ে ওঠায় এবং পাহাড় কেটে ফেলায় হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। এর সঙ্গে বন্যপ্রাণী, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ হারাচ্ছে আবাসস্থল। এসব সংরক্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আশার আলো দেখা যাচ্ছে।’

পাখি বিষয়ক আলোকচিত্রী ইঞ্জিনিয়ার সবুজ চাকমা বলেন, ‘বন উজাড় ও একক সেগুন বাগানের কারণে বন্যপ্রাণী ও পশুপাখিরা অভয়াশ্রম হারাচ্ছে। একসময় খাগড়াছড়ির আলুটিলায় হরিণ, বানর, বনমোরগসহ নানা প্রজাতির পাখি দেখা যেত, কিন্তু এখন সব বন উজাড় হয়ে গেছে। বেশির ভাগ বনেই ব্যক্তি মালিকানায় বাগান গড়ে উঠেছে। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে বন উজাড় করে ফেলা হয়েছে। অনেক গাছ হারিয়ে গেছে।’ তিনি জানান, জার্মপ্লাজম সেন্টারের মাধ্যমে মাতৃবৃক্ষ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ করে পুনরায় এসব উদ্ভিদ যদি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে পাখিদের অভয় আশ্রম গড়ে উঠবে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘আরণ্যক ফাউন্ডেশন নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৮৫ প্রজাতির বৃক্ষ ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে।’ এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান।

খাগড়াছড়ি জার্মপ্লাজম সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক আশীষ বড়ুয়া জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাতৃবৃক্ষ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ করার জন্য কাজ করছেন তারা। বিলুপ্তপ্রায় এসব গাছ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলের সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বণাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাওয়া, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় মাতৃবৃক্ষ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। গত দুই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে বর্তমানে জার্মপ্লাজম সেন্টারে ৩৬ প্রজাতির তিন হাজার ২৭৯টি বৃক্ষের চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।’

এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামকে আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য ১৮৫ প্রজাতির মাতৃবৃক্ষ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

এমজে/