করোনা চিকিৎসায় বেশি দিন থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে

করোনা চিকিৎসায় বেশি দিন থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে

বর্তমানে করোনা চিকিৎসায় বেশি হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্য দিকে ঢাকা শহরের হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ বেড কমছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি ১০ দিন পরপর ঢাকা মহানগরীতে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ১৯ হাসপাতালে শূন্য সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ শয্যা ধীরে ধীরে কমছে। অন্য দিকে হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি আগের চেয়ে বাড়ছে। সাধারণ চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শয্যা যেমন কমেছে আবার এটাও সত্য যে ভর্তি রোগীদের অপেক্ষাকৃত বেশি দিন থাকতে হচ্ছে হাসপাতালে। অন্য দিকে দৈনিক মোট শনাক্তের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ছে না।

যেমন গতকাল বুধবার পর্যন্ত শুধু ঢাকা মহানগরীতে করোনার জন্য আইসিইউ শয্যা ছিল ২৮৮টি। এই শয্যাগুলোতে রোগী ভর্তি ছিল ২১৪ জন এবং খালি ছিল ৭৪টি। প্রায় তিন মাস ১০ দিন আগে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীতে করোনার জন্য আইসিইউ শয্যা ছিল ৩১০টি। এসব শয্যাতে রোগী ভর্তি ছিল ১৯৯ জন এবং খালি ছিল ১১১টি। একই দিন ঢাকা মহানগরীর ১৯ হাসপাতালে করোনার জন্য সাধারণ শয্যা ছিল ছয় হাজার ২৬৬টি এবং সাধারণ শয্যায় ভর্তি ছিল দুই হাজার ১৪৪টি শয্যায়। অন্য দিকে খালি ছিল চার হাজার ১১২টি শয্যা।

২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীতে করোনা চিকিৎসার জন্য আইসিইউ শয্যা ছিল ৩০২টি এবং ভর্তি ছিল ১৯৬টি শয্যায়। একই দিনে আইসিইউ শয্যা খালি ছিল ১০৬টি। সেদিন সাধারণ করোনা শয্যা ছিল পাঁচ হাজার ৮৭০টি, ভর্তি ছিল এক হাজার ৮৭৩টিতে এবং শূন্য ছিল তিন হাজার ৯৯৭টি শয্যা।

৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীতে সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা খালি যথাক্রমে এক হাজার ৭০০টি এবং ১১৭টি। ১০ অক্টোবর সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা খালি ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৭৭১টি ও ১৫৬টি। ২০ অক্টোবর সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা খালি ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৭৭৯টি ও ১৩১টি। ৩০ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীতে সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা খালি ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৮২১টি ও ১৪২টি।

অন্য দিকে ১০ ও ২০ নভেম্বর করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সাধারণ শয্যা শূন্য ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৬৩৬টি এবং এক হাজার ৪৪১টি। ১০ ও ২০ নভেম্বর আইসিইউ শয্যা শূন্য ছিল যথাক্রমে ১২৮টি ও ৯৮টি। ৩০ নভেম্বর আইসিইউ শয্যা খালি ৯১টি এবং সাধারণ শয্যা খালি ছিল এক হাজার ১৯৬টি। ১০ ডিসেম্বর সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা খালি ছিল যথাক্রমে এক হাজার ২৬৪টি ও ৮৩টি। সর্বশেষ গতকাল ১৬ ডিসেম্বর সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা শূন্য ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৩৩০টি ও ৭৪টি।

বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন এমন কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, এর মধ্যে অবশ্য সাধারণ ও আইসিইউতে মোট শয্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার এটাও সত্য যে নভেম্বরের পর হতে করোনা চিকিৎসায় অপেক্ষাকৃত একটু বেশি সময় লাগছে। এটা কেন হচ্ছে তা গবেষণা করে হয়তো উচ্চপর্যায় থেকে বলবে কিন্তু আমরা যারা সাধারণ চিকিৎসক তাদের কাছে মনে হচ্ছে করোনা চিকিৎসায় তা সাধারণ শয্যায় হোক কিংবা আইসিইউ শয্যায় হোক সেরে উঠতে একটু বেশি সময় লাগছে।

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ২১৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ দিন এক হাজার ৫৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় উল্লিখিত সংখ্যক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ হাজার ৩৩০ জন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি সাতটি ল্যাব ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে এসব নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৪৭৫টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৩৩ জন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৪৭৭টি নমুনা পরীায় ৭২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ৪৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

এ ছাড়া বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ১১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৭ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজন এবং শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ১২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ২৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়। কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে মোট করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ২১৮ জনের। এর মধ্যে ১৮৩ জন নগরীর এবং ৩৫ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

এমজে/