বৃটেনের যাত্রীবাহী ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে ইইউ-এর কয়েকটি দেশ এবং কানাডা

বৃটেনের যাত্রীবাহী ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে ইইউ-এর কয়েকটি দেশ এবং কানাডা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ এবং কানাডা বৃটেনের সঙ্গে সব রকম যাত্রীবাহী বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বৃটেনে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ার কারণে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব দেশ এখন পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা হলো আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম। তবে দেশভেদে এই বিধিনিষেধে ভিন্নতা আছে। যেমন ফ্রান্স বলেছে চ্যানেল ফ্রেইট চলাচলেও এর প্রভাব পড়বে। আজ সোমবার সকালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আলোচনায় বসবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে আরো বলা হয়, লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ওইসব এলাকায় নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। জারি করা হয়েছে টিয়ার ৪ বা সর্বোচ্চ লকডাউন। বড়দিন উপলক্ষে যখন বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, তখন সংক্রমণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেন সরকারকে। সংক্রমণ দ্রুত বিস্তার লাভ করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জনসন ওই বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। শীর্ষ স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন করে সংক্রমণ অধিক মাত্রায় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে এমন প্রমাণ নেই। করোনার টিকায় ভিন্নভাবে এতে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে তারা বলেছেন, এই ভাইরাস যে শতকরা ৭০ ভাগের বেশি সংক্রমিত হবে এর স্বপক্ষে প্রমাণ মিলেছে। ওদিকে বৃটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক নতুন এই সংক্রমণকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার ভাষায়- ‘তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে আমাদের।’

বৃটিশ সরকার শনিবার এমন ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে রোববার থেকে বৃটেনের সকল যাত্রীবাহী ফ্লাইট আগামী ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে নেদারল্যান্ডস। দিনশেষে তারা আরো বলেছে, বৃটেন থেকে জলপথে যাওয়া সব যাত্রীর ক্ষেত্রেও তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে ফ্রেইট চলাচল অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, রোববার বৃটেনে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩০০০ মানুষ। এটা এক দিনে বৃটেনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ অবস্থায় বৃটেনের সঙ্গে ফ্রেইট লরিসহ সব রকম ট্রাভেল রোববার মধ্যরাত থেকে ৪৮ ঘন্টার জন্য সাময়িক স্থগিত করেছে ফ্রান্স। এ দুটি দেশের মধ্যে শত শত লরি চলাচল করে প্রতিদিন। এরই মধ্যে পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত ডোভারে ফেরি টার্মিনাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে এতাই চাপ সৃষ্টি হয়েছে যে, এ ইস্যুতে আজ সোমবার জরুরি কোবরা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করার কথা বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের।

বছরের এ সময়টাতে বিপুল পরিমাণ যাত্রী সফর করেন আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনের মধ্যে। কিন্তু আয়ারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ড থেকে রোববার মধ্যরাত থেকে ৪৮ ঘন্টার জন্য সব রকম যাত্রীবাহী ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে বৃটিশ জনস্বাস্থ্যের জন্য বৃটিশদের উচিত হবে না এ সময় আয়ারল্যান্ডে সফরে যাওয়া। সেটা আকাশপথে হোক বা জলপথে হোক।

জার্মানির পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাত থেকে বৃটেন থেকে যাওয়া কোনো বিমানকে জার্মানিতে অবতরণ করতে দেয়া হবে না। তবে এক্ষেত্রে কার্গো হবে ব্যতিক্রম। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন বলেছেন, বৃটেনে করোনার যে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেই অবস্থা জার্মানিতে সৃষ্টি হয়নি। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে রোববার মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টার জন্য বৃটেন থেকে সব রকম ফ্লাইট এবং রেল যোগাযোগ স্থগিত করেছে বেলজিয়াম। ৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত সব রকম ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে ইতালি। বৃটেন থেকে ফ্লাইট বন্ধ করছে অস্ট্রিয়াও। রোববার মধ্যরাত থেকে সব রকম ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত করেছে বুলগেরিয়া। তুরস্ক এবং সুইজারল্যান্ডও বৃটেন থেকে অস্থায়ীভিত্তিতে সব রকম ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে।

এমজে/