আদালতে দাঁড়ানোর আগেই সরে দাঁড়ালেন এসআই আকবরের আইনজীবী

আদালতে দাঁড়ানোর আগেই সরে দাঁড়ালেন এসআই আকবরের আইনজীবী

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে রায়হান আহমদকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবরের পক্ষে লড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তার নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মিসবাউর রহমান আলম। আদালতে দাঁড়ানোর আগেই তিনি বৃহস্পতিবার আকবরের পক্ষে দায়েরকৃত ওকালতনামা সারেন্ডার করেন এবং এ সংক্রান্ত একটি আবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।

মিসবাউর রহমান জানান, তার সিনিয়র আইনজীবীকে জড়িয়ে সমালোচনা হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুক্রবার আইনজীবী মো. মিসবাউর রহমান আলম জানান, আইন পেশায় থেকে অনেক হত্যা-অপহরণসহ অনেক মামলা পরিচালনা করেছি। আমার কাছে রায়হান হত্যা মামলাও তেমনি একটি মামলা ছিল। অধিক অর্থ প্রাপ্তি নয়, বরং আকবরের পক্ষে তার মামলা পরিচালনার জন্য যোগাযোগ করা হলে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই মামলাটি গ্রহণ করি। হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের মামলাটি আমার কাছে একেবারেই নতুন ধরনের ও চ্যালেঞ্জের ছিল। তাই কোনো কিছু না ভেবে মামলাটি গ্রহণ করি এবং আকবরের পক্ষে আদালতে ওকালতনামাও দাখিল করি।

তিনি বলেন, আইনি সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে দণ্ডিত করা যায় না। তদুপরি এ মামলাটি সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশের মামলা। এ রকম মামলায় আসামি আইনজীবী নিয়োগে অক্ষম হলে রাষ্ট্র তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে বাধ্য। কোনো কারণে যদি আসামিপক্ষ আইনজীবী পেতে ব্যর্থ হয়, তবে পুরো বিচার প্রক্রিয়াই আটকে যাবে। বিচার প্রার্থীই তাতে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আকবরের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হতে আমি সম্মত হই।

এই আইনজীবী আরও বলেন, কিন্তু অনেকেই আমার শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়রকে জড়িয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আকবরের পক্ষে আইনি লড়াই থেকে বিরত হলাম। ২৪ ডিসেম্বর আকবরের পক্ষে দায়েরকৃত ওকালতনামা সারেন্ডার করেছি এবং এ সংক্রান্ত একটি আবেদনও আদালতে দাখিল করেছি। আকবর কোনো আইনজীবী না পেলে এ মামলার বিচার হবে না- সেটা যেমন রায়হানের পরিবারের জন্য সুখকর হবে না, তেমনি তা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠারও অন্তরায় হবে।

এর আগে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয় আকবরের পক্ষে সিলেটের কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াবেন না। রায়হানের বাড়িতে গিয়েও এমনটি জানিয়েছিলেন সমিতির নেতারা।

উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর সকালে মারা যান নগরীর আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ (৩৪)। বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর ওই রাতেই হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তামান্না আক্তার। এরপর মহানগর পুলিশের একটি টিম তদন্ত করে নির্যাতনের সত্যতা পায়।

নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও ৫ জনকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ১৩ অক্টোবর এসআই আকবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।