র‍্যাবের দাবি ‘ইউরেনিয়াম’, পুলিশ বলছে ‘ধাতব পদার্থ’

র‍্যাবের দাবি ‘ইউরেনিয়াম’, পুলিশ বলছে ‘ধাতব পদার্থ’

রাজধানী রামপুরার একটি বাসা থেকে তিনজনকে আটক করেছেন র‍্যাব-১০-এর সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে ৫৫ কোটি টাকা মূল্যের ‘ইউরেনিয়াম’ উদ্ধার করার দাবি করেছে র‍্যাব। গতকাল মঙ্গলবারের ওই অভিযানের পর তিনজনকে রামপুরা থানায় হস্তান্তর করা হয়।

তবে রামপুরা থানা পুলিশ বলছে, এটি ইউরেনিয়াম নাকি অন্য কিছু তা এখনো নিশ্চিত নয় তারা। র‍্যাবের হস্তান্তর করা তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এদিকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বলছে, ৫৫ কোটি টাকার ইউরেনিয়াম একটি বাসায় রাখা অসম্ভব। এটি একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু। এটা এতটাই শক্তিশালী যে, এই ধাতু দিয়ে নিউক্লিয়ার বোমা বানানো যায়। আর সেই ধাতু একটি ব্যাগে রাখার কথা না।

আজ বিকেলে র‍্যাব-১০-এর উপঅধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব রামপুরার জাকের গলি এলাকার ২৪৩/এ শুকরিয়া ভবনে অভিযান পরিচালনা করি আমরা। সে সময় চামড়ার ব্যাগ থেকে আনুমানিক ৫৫ কোটি টাকা মূল্যের ইউরেনিয়ামসহ তিনজনকে আটক করা হয়।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এটা ইউরেনিয়াম নাকি অন্য কিছু তা আমরা জানি না। আমাদের কাছে র‍্যাব কিছু ধাতব পদার্থসহ তিনজনকে রেখে গেছে। আমরা ওই তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘ধাতব পদার্থগুলো আমরা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে পাঠাব। তারপর যদি প্রমাণিত হয় এগুলো ইউরেনিয়াম তাহলে আলাদা করে মামলা করা হবে। আর না হলে ওই তিনজনের বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিবেন।’

তবে র‍্যাব কর্মকর্তা শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান দাবি করে বলেন, ‘আটকের পর তিনজন স্বীকার করেছেন যে, বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে তারা ইউরেনিয়াম ক্রয় করে তা বিক্রয় করে আসছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসআইডি) ড. মো. খোরশেদ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটি চামড়ার ব্যাগে ইউরেনিয়াম রাখা অসম্ভব। কোনো চিন্তায়ই এটা সম্ভব নয়। এবং এত কোটি টাকার ইউরেনিয়াম একটি বাসায় কেউ রাখবে না। এটা সংরক্ষণেরও কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেসব অনুসরণ না করে ইউরেনিয়াম সংরক্ষণ করা যায় না। আমার জানা মতে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’

র‍্যাবের অভিযানে আটক তিনজন হলেন কুষ্টিয়া সদরের এবিএম সিদ্দিকী বাপ্পী (৫৯), রাজধানী পল্লবীর মো. আক্তারুজ্জামান (৩৩) ও শরীয়তপুরের মো. মিজানুর রহমান(৫০)।

র‍্যাব কর্মকর্তা শাহরিয়ার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অভিযানের সময় একটি চামড়ার বাক্স, একটি ছোট চামড়া ও স্টিলের বাক্স পাওয়া যায়। যার গায়ের ওপর ইংরেজিতে লেখা ছিল, URANIUM ATOMIC ENERGY METALIC ELEMENT ATOMIC WEIGHT 222.07 (A) 2L.B LABPROS। এ ছাড়া একটি চামড়ার জ্যাকেট (গ্রাউন), একটি রিমোট, একটি ম্যানুয়েল বই, একটি গ্যাস মাস্ক, একটি ইলেকট্রিক মিটার, একটি রাবারের ড্রপার, একটি স্টিলের ঢাকনাযুক্ত কাচের পট, পাঁচটি কাচের তৈরি ছোট চিকন পাইপ, একটি কেচি, একটি মিটার, একটি কালো কম্পাস, দুইটি পাইপ সদৃশ বস্তু, একটি মেটাল ছাকনি, একটি ক্যাটালগ ও এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাভস জব্দ করা হয়।’