গোলাগুলি-কেন্দ্রদখল-বর্জনে শেষ হলো পৌরভোট

গোলাগুলি-কেন্দ্রদখল-বর্জনে শেষ হলো পৌরভোট

সংঘর্ষের সময় গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, প্রার্থীর ভোট বর্জন ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। তবে কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগ এনে নয় পৌরসভায় মোট ১০ জন মেয়র পদপ্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা আটজন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) দুজন রয়েছেন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে প্রাথমিক ফলাফল কেন্দ্রে কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হবে। তারপর সেসব ফলাফল চলে আসবে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সব কেন্দ্রে ফলাফলের ভিত্তিতে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন।

শীতের সকালবেলায় সুষ্ঠুভাবে ভোট শুরু হলেও তখন ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক ছিল কিছুটা কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়লে থাকলে কোথাও কোথাও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে।

রামগঞ্জে তিনজন গুলিবিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাজিরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনের সড়কে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কয়েকজন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

হরিণাকুণ্ডুতে ব্যালট ছিনতাই, বাক্স ভাঙচুর

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার মান্দারতলা কেন্দ্রে ঢুকে দুটি ব্যালট বক্স ভাঙচুর এবং বেশ কিছু ব্যালট নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কমপক্ষে পাঁচ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছেন।

শৈলকূপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, ভোট ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

মণিরামপুরে হাতবোমা, নলছিটিতে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ

যশোরের মণিরামপুর পৌরসভার ৯ নম্বর বিজয়রামপুর কেন্দ্রের অদূরে এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এ সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।

ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ খানের কর্মীদের সঙ্গে বহিরাগতরা কেন্দ্র দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি বুথে মেয়র পদপ্রার্থীর ব্যালট রেখে ভোটারদের শুধু কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ব্যালট দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

ভোট বর্জন

আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ সদর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ইসরাইল মিয়া ভোট বর্জন করেছেন। এ ছাড়া জেলার কটিয়াদি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সালমা আনিকা ভোট বর্জন করেছেন।

এদিকে, সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী শরিফুজ্জামান তুহিন আর ঝালকাঠির নলছিটিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মজিবুর রহমানের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) সাবেক মেয়র মাসুদ খানও ভোট চলাকালে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান, নাটোরের সিংড়া পৌরসভার বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী তায়জুল ইসলাম ও ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মো. হাতেম আলী খাঁন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ফয়জুর কবীর তালুকদার শাহীন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল লতিফ পান্নাও ভোট বর্জন করেছেন।

যে ৬২ পৌরসভায় ভোট

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নওগাঁর ধামইরহাট ও নওগাঁ, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বগুড়ার ধুনট, গাবতলী ও কাহালু, রাজশাহীর মুন্ডুমালা, মৌলভীবাজারের মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফেনীর ফেনী, মুন্সীগঞ্জের সদর, শরীয়তপুরের জাজিরা, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, শেরপুরের নকলা, নাটোরের সিংড়া, রাজশাহীর কেশরহাট, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, ঝালকাঠির নলছিটি, নেত্রকোণার দুর্গাপুর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, যশোরের মনিরামপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, টাঙ্গাইলের মধুপুর, শরীয়তপুরের নাড়িয়া, বরগুনার বরগুনা ও পাথরঘাটা, ভোলার বোরহানউদ্দিন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, কুড়িগ্রামের উলিপুর, দিনাজপুরের হাকিমপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর, নড়াইলের নড়াইল, সাতক্ষীরার কলারোয়া, রাজবাড়ীর পাংশা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী, বরিশালের গৌরনদী, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, ময়মনসিংহের ভালুকা, গৌরীপুর, সিলেটের জকিগঞ্জ, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু, টাঙ্গাইলের টাঙ্গাইল ও মির্জাপুর, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, কুমিল্লার বরুড়া, নোয়াখালীর চৌমুহনী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, ভোলার দৌলতখান, নীলফামারীর জলঢাকা, পাবনার পাবনা, বগুড়ার শিবগঞ্জ, খুলনার পাইকগাছা, নড়াইলের কালিয়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর ও সখিপুর পৌরসভা।

এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে পৌরসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় ২৮ ডিসেম্বর। গত ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় ভোট হয়। তৃতীয় ধাপে আজ ৬২টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে। চতুর্থ ধাপে ৫৭ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া পঞ্চম ধাপের ৩১ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।

আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোটগ্রহণ করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়।