‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের কেউ কেউ কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছে’

‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের কেউ কেউ কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছে’

মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের কেউ কেউ টাকা পাচার করে কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছে। তারা ফের শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করতে আসন্ন বায়রা নির্বাচনে বিজয়ী হতে নানা ফন্দিফিকির করছে। বায়রা শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে সব রিক্রটিং এজেন্সির মালিককে একসাথে কাজ করতে হবে। লাইসেন্স যার, ব্যবসা তার-এই অঙ্গীকারে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের ৯টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বায়রা সিন্ডিকেট নির্মূল ঐক্যজোটের সভায় বক্তারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার সিন্ডিকেট গড়ে তোলার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।

সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ সভা রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত চলে। এতে জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বায়রার সদ্য বিদায়ী সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি বলেন, আমি বায়রার পক্ষ থেকে মালয়েশিয়া সরকারকে সিন্ডিকেট বন্ধে চিঠি দিয়েছিলাম। কেন চিঠি দিলাম এ নিয়ে নানা অপপ্রচার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত ভুল বোঝানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। মূলত চিঠির মাধ্যমে আমরা মালয়েশিয়া সরকারকে বলেছিলাম যে আমরা (জনশক্তি ব্যবসায়ীরা) সিন্ডিকেট চাই না। সবাই এই বাজারে কাজ করতে চাই। সরকারকে বুঝানো হয়েছে বায়রার কারণে নাকি মালয়েশিয়া-লিবিয়ার বাজার ওপেন করা যাচ্ছে না। একই চক্র বায়রাতে সুকৌশলে প্রশাসক বসানোর ব্যবস্থা করেছে।

তিনি বলেন, জনশক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য অভিবাসী আইন রয়েছে। কিন্তু, কোনো কিছু হলেই আমাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও বুঝতে পারে না যে, কোনটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য। এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের মানসম্মান নষ্ট করা চলবে না। সবাইকে নিয়ে সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজার ও বায়রা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বেনজীর আহমেদ।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ইতোপূর্বে কোরিয়া, সিঙ্গাপুরে সিন্ডিকেট হয়েছে। মালয়েশিয়ায় ফের সিন্ডিকেট করার অপতৎপরতা চলছে। তারা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। আমরা সিন্ডিকেট মুক্ত বায়রা ও শ্রমবাজার চাই। ১০ সিন্ডিকেট সরকারকে বলেছিল ৬০ হাজার টাকায় শ্রমিক পাঠাবে। সেখানে তারা নিয়েছে ৩ লক্ষাধিক টাকা। তারা সরকারের সাথেও প্রতারণা করেছে। তারা বিশ্বাসঘাতক। তাদের উৎখাত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। লাইসেন্স যার, ব্যবসার তার-এটা হতে হবে। যার নেতৃত্বে গতবার মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট হয়েছিল, তিনি নাকি এবার বায়রার সভাপতি হতে চান। এটা হতে দেয়া হবে না।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। যারা সিন্ডিকেট করে টাকার পাহাড় গড়েছে, টাকা পাচার করে কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছে সেই অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বায়রার সাবেক দুই বারের সভাপতি বলেন, শুধু সৌদি আরবসহ গুটি কয়েক দেশ নয়, বন্ধ শ্রমবাজারগুলো খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। বায়রাকে সাথে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নতুন নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ সময় তিনি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের আশ্বাস দেন সিন্ডিকেটমুক্ত বায়রা ও শ্রমবাজার আন্দোলনে তিনি সবসময় পাশে থাকবেন। কাউকে সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি না হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

প্রতিবাদ সভার সভাপতি বায়রার চার বারের সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সবাইকে নিয়ে সিন্ডিকেটমুক্ত বায়রা প্রতিষ্ঠার কথা জানান। এজন্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন।

বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান ও রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি টিপু সুলতানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বায়রার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাদত হোসেন, জনশক্তি ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান, সাবেক সহ-সভাপতি একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, আবুল বারাকাত, আকবর হোসেন মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম, আরিফুর রহমান, হারুনর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, মোহাম্মদ আলী, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, একেএম জসিম উদ্দিন, লিমা বেগম, ফাতেমা বেগম, আহমাদুল্লাহ বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এমজে/