বাসাবাড়ির ময়লা নেয়া বন্ধের হুমকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের

বাসাবাড়ির ময়লা নেয়া বন্ধের হুমকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের

আগামী সাত দিনের মধ্যে বেসরকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অনুমোদন ও প্রত্যয়ন দেয়ার অনুমতি ফিরিয়ে দেয়া না হলে রাজধানী ঢাকার বাসাবাড়ির ময়লা নেয়া বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগঠন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি)। পাশাপাশি ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর রুটি-রুজি বন্ধের চক্রান্ত ‘বর্জ্যের টেন্ডার’ বন্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাপনের কাপড় পরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তারা এ হুমকি দেন। এসময় তারা কাপনের কাপড় পরে ময়লার টেন্ডার বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কান্নাকাটি করে আকুতি জানান। মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, ঢাকার বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি শুধু নির্ধারিত কনটেইনার থেকে ল্যান্ডফিলে ময়লা অপসারণের কাজ করছে। তাদের যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শুধুমাত্র শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ঝাড়ু দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।

তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি) এর প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী নাগরিকদের বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের কন্টেইনারে পৌঁছে দেয়। এজন্য শুধুমাত্র সেবা মূল্য হিসেবে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে নিতাম। যা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অফিস ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হতো।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই নেত্রী বলেন, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য যে, নগরবাসী তাদের হোল্ডিং করের সঙ্গে মোট করের ২ শতাংশ বর্জ্যের জন্য বিল দিয়ে থাকেন। তার সঙ্গে আবার নতুন করে ১০০ টাকা ধার্য করে টেন্ডারের মাধ্যমে এই কাজ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে যেসব বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলো তারা এখন কর্ম হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। লাকী বলেন, এরই মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দিয়ে দিয়েছে। এতে দক্ষিণ সিটিতে আমাদের ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী বেকার হয়েছে। তারা এখন কর্ম হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। ময়লা সংগ্রহণের এই সেবামূলক পুরো কাজ এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। টেন্ডারে দেয়ার কারণে দক্ষিণ সিটিতে নাগরীকদের হয়রানি আরও বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাধর কাউন্সিলর বা ঠিকাদারদের লোকজন সেই ১০০ টাকার পরিবর্তে কোথাও কোথাও ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। সিটি করপোরেশন কৌশলে তাদের কাউন্সিলরদের হাতে এই সেবামূলক কাজকে ব্যবসায় রূপান্তর করে কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দিয়েছে। এতে যেমন অতিরিক্ত করের চাপে পড়ছে নগরববাসী ঠিক একইভাবে এই করোনাকালে কর্ম হারাতে বসেছে আমাদের বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

তিনি আরও বলেন, আমরা দুই মেয়রের আচরণে হতবাক হয়েছি। নগরীর বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা যখন এই শহরকে পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করে আসছি ঠিক সেই কর্মীরা গত দুই বছর ধরে দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু আমাদেরকে কোনও সাড়া দেয়া হয়নি। আমরা বহুবার মেয়রকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনও কর্ণপাত করেননি। আমাদের কোনও কথাও শুনতে রাজি হননি। তারা চান এই ময়লা সংগ্রহের সেবামূলক কাজকে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিণত করে কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য। এর প্রতিবাদে আমরা যখন গত ১২ই জানুয়ারি এই জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি তখন মেয়র আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজি হলেন। তিনি ডেকে নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে দিলেন, আমাদের অনুমোদন দিয়ে দিতে। তখন আমরা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করি। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদেরকে বললেন, মেয়র নাকি তাকে কিছুই বলেননি। অপরদিকে বর্তমানে আমাদের কোনও অনুমোদন না থাকায় সব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও তাদের সন্ত্রাসীরা আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড দখল করে নিয়েছে। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি- কাউন্সিলরদের চাপের কারণে এই টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা টেন্ডারের প্রাথমিক কাগজপত্র দেখেছি। সেখানে একজন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার বড় কাজ করতে যেসব কাগজপত্র লাগে এই কাজের জন্যও একই কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। তাহলে আমাদের এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেই কাগজপত্র কোথায় পাবে। তাদের থেকে টিন সার্টিফিকেট, ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধনের কাগজ, ব্যাংক সলভেন্সি ও ব্যাংকে জামানতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তাদের যদি এসব কাগজপত্র থাকতো তাহলে তো তারা এই ময়লা সংগ্রহের কাজ করতো না। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের মতো ব্যবসায়ী হতো।

এ অবস্থায় আমাদের দাবি-আগামী সাত দিনের মধ্যে টেন্ডার বাতিল করে সিটি করপোরেশন কর্তৃক অনুমোদন ও প্রত্যয়ন ফিরিরে না দিলে নগরীর বাসাবাড়ির ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের হাতে গঠা ফাউন্ডেশন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিডব্লিউসিএসপি) প্রত্যয়ন ফিরে দিতে হবে। ময়লা সংগ্রহ কাজের অধিক দামের টেন্ডারে বন্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু নীতিমালা করে স্বল্প সেবামূল্য নির্ধারণ করে আমাদেরকে অনুমোদন দিতে হবে। ময়লা সংগ্রহের কাজে কাউন্সিলরদের দখলবাজি বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতাকাজে নিয়োজিত সংগঠনগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিমাসে অন্তত দুই মেয়রকে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে।

এমজে/