ভালোবাসার দিনে ফাগুনের উৎসব

ভালোবাসার দিনে ফাগুনের উৎসব

পাতাঝরা দিন ভালোবাসার ডাক দিয়ে যায়। মনের অজান্তে ভেতর থেকে ভেসে আসে নানা অব্যক্ত পঙ্‌ক্তিমালা।

জীবনানন্দের ভাষায়- ‘হৃদয়, তুমি সেই নারীকে ভালোবাসো, তাই/আকাশের ঐ অগ্নিবলয় ভোরের বেলা এসে/প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে অমেয় কাল হৃদয় সূর্য হবে/তোমার চেয়েও বেশি সেই নারীকে ভালোবেসে।’ আজ বসন্ত ও ভালোবাসার দিন।

কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিন হলো ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পেলো। প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটি প্রকাশ করেছে ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইন’স ডে’ উচ্চারণ করে।

বসন্ত ও ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে রাজধানীসহ সারা দেশ আজ মেতে উঠেছিল ফাল্গুনী আমেজে। ঋতুরাজের দখিনা বাতাস তাদের হৃদয়-জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলে অনেকে হৃদয়ে। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রার সুষমার শৈল্পিকতা ফুটে উঠছে তরুণীদের। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও কম যায়নি। তরুণরাও ধরা দিয়েছে হলুদ পাঞ্জাবিসমেত একরাশ ফাল্গুনী সাজে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এমনকি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনেও দেখা গেছে ফাগুনের ঝলমলে রঙ। সর্বত্রই তারুণ্যের উন্মাদনার ঢল।

রোববার ভোরে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ - এর আয়োজনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে হল বসন্ত উৎসব। রঙে রঙিন হয়ে তাতে সামিল হলেন নগরবাসী।

হলুদ, কমলা, লাল, সবুজের বাহারি বসন, চুলে হলুদ গাঁদা কিংবা মাথায় ফুলের মুকুট, কপালে টিপ- এ হল বাঙালি নারীর বসন্ত সাজ।

উজ্জ্বল রঙ লেগেছে পুরুষের সাজেও, তা সে পাঞ্জাবিই হোক, কিংবা টি-শার্ট ।

বরাবর ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পালিত হলেও গত বছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্ত উৎসব এখন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে।

সকাল সাড়ে ৭টায় দীপেন সরকারের যন্ত্র বাদনে শুরু হয় নগরবাসীর বসন্ত বন্দনা। এরপর পংক্তিমালায় বসন্তের আবাহন করেন এবছরের একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে রোববার সকালে গানে গানে ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানান শিল্পীরা।

নৃত্যছন্দ, সুরবিহার, আঙ্গীকাম, ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র, ভাবনা ধৃতি, দ্রুপদী নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাধনা সংস্কৃতি মণ্ডল, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বুলবুল ললিতাকলা একাডেমি, মুদ্রা, মৌমিতা, মারমা সম্প্রদায়, সাঁওতাল সম্প্রদায় ও কথক নৃত্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় ছিল দলীয় নৃত্যশিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শোয়েব, সঞ্জয় কবিরাজ, জান্নাতুল ফেরদৌস কাকলি, কাইয়ুম, নুসরাত বিনতে নূর ও নবনিতা জাইদ চৌধুরীর কণ্ঠে একক সংগীতেও ছিল বসন্তের বন্দনা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।

তিনি বললেন, মহামারীর এ দুঃসময়কে পাশে ঠেলে বসন্তের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাবে বাঙালি, এই হোক প্রার্থনা।

উৎসব পরিষৎ এর সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, আমাদের সব অর্জন কিন্তু প্রকৃতি থেকে। এ দিনে তরুণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান, তারা যেন এ প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।

বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলের এমন দিনকে বরণ করতে ফুলের দোকান আর মার্কেটের শাড়ি-পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে গত কয়েকদিন ছিল বিশেষ ভিড়।

প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে সকালে আয়োজন করা হয় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে বসন্ত উৎসব ১৪২৭ আয়োজন করা হয়। এবার কোভিড-১৯ এর কারণে অনুষ্ঠানের স্থল পরিবর্তন ও অনুষ্ঠান সংকুচিত করা হয়।

তবে অনেক স্থানেই মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। করোনা মহামারীর মধ্যে সীমিত পরিসরে দেশের নানা জায়গায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে পহেলা ফাগুন ও ভ্যালেনটাইন’স ডে উদযাপন হয়েছে।