লেখক মুশতাকের মৃত্যুতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র

লেখক মুশতাকের মৃত্যুতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে অবিলম্বে বিচারবিভাগীয় কমিটি গঠন করার তাগিদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

বুধবার রাতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামালের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমদের মৃত্যুর কারণ তদন্তে গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগকে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে টানা দশমাস জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে কার্টুনিস্ট কিশোর গ্রেফতারের পর তাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি মুশতাক আহমেদকেও নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যা ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

কিশোরের অভিযোগ কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দিলেও এখন পর্যন্ত এমন গুরুতর অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আসক কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না।

আসক অবিলম্বে একটি বিচারবিভাগীয় কমিটির মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া, নির্যাতন ও মুশতাক আহমদের মৃত্যুর কারণ নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার জোর দাবি জানাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহুল বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কাশিমপুর কারাগারে হাই সিকিউরিটি ইউনিটে বন্দী থাকাকালীন অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমদের মৃত্যুর ঘটনা সাবার মধ্যে নানা উদ্বেগ ও শংকার উদ্রেক করে। মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হয়। ময়নাতদন্তে ও সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগকে দায়ী করা হলেও কার্টুনিস্ট কিশোরের বর্ণনায় একটি ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়, যা সবার আশংকার সাথে মিলে যাচ্ছে।

এছাড়া উল্লেখিত আইনে সর্বোচ্চ ১০৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা ও চার্জশিট জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তদন্তকারীরা তা করতে পারেননি। গেফতারের দীর্ঘ আট মাস পর অভিযোগ গঠন করা হয়। আসক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এ পুরো প্রক্রিয়ায় মুশতাক আহমেদ ও কিশোর কবিরের মানবাধিকার গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

পাশাপাশি তদন্তে আরো বেশ কিছু বিষয় বিচেনায় আনা আবশ্যক বলে আসক বিশ্বাস করে। ডিজিটাল আইনের মত একটি বিতর্কিত আইনের আওতায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কিংবা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে তুলে নেয়া, বারবার জামিন প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, তুলে নেয়ার পর সংবিধান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট আইন অমান্য করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখে নির্যাতন করাসহ যে অভিযোগসমূহ উঠেছে তা অত্যন্ত গুরুতর এবং রাষ্ট্রের জন্য এসব অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। সরকারের দায়িত্ব এগুলোর নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জনগণকে প্রকৃত সত্য জানানো।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সরকারের কাছে যে দাবি জানাচ্ছে তা হলো:

১. জরুরী ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্ত নিশ্চিত করা হোক;

২. মুশতাক আহমেদকে যে মানসিক যন্ত্রণা বা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় আনা হোক;

৩. কিশোরকে নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত নিশ্চিত করা হোক;

৪. বিচারবিভাগীয় কমিটি তদন্তের ফলাফল বা প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা;

৫. সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা; পাশাপাশি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এ আইনে কাউকে গ্রেপ্তার না করা।