গ্রেপ্তার হওয়ার পর নির্যাতন

লোমহর্ষক নির্যাতনের বিবরণ দিলেন কার্টুনিস্ট কিশোর

লোমহর্ষক নির্যাতনের বিবরণ দিলেন কার্টুনিস্ট কিশোর

গ্রেপ্তার হওয়ার পর নির্যাতনের অভিযোগে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।

এর আগে, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো আদালতে হাজিরা দেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। তিনি ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে হাজিরা দেন। পুনঃতদন্তে থাকা এ মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে আগামী সাত দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হাজির হতে বলা হয়েছে। জামিনে থাকা মিনহাজ মান্নান হাজির হলে তাকে তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। গত বছর ৫ই মে লেখক মুশতাক আহমেদ এবং কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান এবং রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

আবেদনে যা বলেছেন কার্টুনিস্ট কিশোর: নির্যাতনের বিষয়ে আবেদনে কিশোর বলেন, গত বছরের ২রা মে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাসার কলিং বেলে আমার ঘুম ভাঙে।

দরজা খুলতেই অপরিচিত এক লোক আমাকে বলেন দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি পরিবর্তন করে প্যান্ট পরে নেন। সঙ্গে একটা ভালো শার্ট পরেন। আমি পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে পরিচয় দেন নাই। কিন্তু তাদের আলাপ-আলোচনায় একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। বাসা থেকে আমার মোবাইল ফোন, সিপিইউ ও পোর্টেবল যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন প্রচণ্ডভাবে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু গাড়িতে অনেক জোরে জোরে শব্দ করে গান বাজানো হচ্ছিল। হয়তো আমার চিৎকারের শব্দ বাইরে শোনা যায়নি। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো এবং একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর প্রজেক্টরে একের পর এক কার্টুন আমাকে দেখানো হচ্ছিলো। সেগুলোর মর্মার্থ আমার কাছ জানতে চাওয়া হয়।

করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে বলে কেন এগুলো আঁকছোস? কার্টুনের চরিত্রগুলোর বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে থাপ্পড় মারে। এরপর কিছুক্ষণের জন্য আমি বোধশক্তিহীন পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা ও ব্যথায় আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।

এভাবে কয়েক দফা গত ০২/০৫/২০২০ইং তারিখ থেকে ০৪/০৫/২০২০ইং পর্যন্ত আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক টর্চার চালায় তারা। পরবর্তীতে আমি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পাই। র‌্যাবের কার্যালয়ে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আলাপের সময় আমাকে জানান তাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছিল। গত বছরের ৬ই মে আমাদের রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ।

কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরো নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

আদালতের বেঞ্চ অফিসার মো. জহুরুল ফয়েজ বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা করেছেন কার্টুনিস্ট কিশোর। আদালত বাদীর জবানবন্দি শুনেছেন। এখন আদেশের জন্য রয়েছে মামলাটি। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।