কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ায় তাড়িয়ে দিল স্বামীর পরিবার

কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ায় তাড়িয়ে দিল স্বামীর পরিবার

এক বছরের সংসার জীবনে ছেলে সন্তানের জন্ম দিতে পারেননি। তাই চার দিনের নবজাতকসহ গৃহবধূকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নবজাতকসহ ওই মাকে উদ্ধার করে। এরপরও স্বামীর ঘরে স্থান না পেয়ে বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে গৃহবধূ রোকসানা খাতুনের।

গতকার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোমামারা গ্রামের বাড়ির উঠান থেকে নবজাতক ও গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এক বছর আগে ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু গত আড়াই মাস আগে স্বামী রাজা মিয়া ডাক্তারি পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন রোকসানা কন্যাসন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন। এরপর তাঁর ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। কখনো মারধর, আবার কখনো যৌতুক চেয়ে নির্যাতন চলে রোকসানার ওপর।

গত ৮ মার্চ স্বামীর বাড়িতে প্রসব বেদনা উঠলে রোকসানাকে দ্রুত রংপুরের সালেহীন ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেদিন হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শে সিজারিয়ান অস্ত্রপচারের মাধ্যমে রোকসানা জন্ম দেন একটি ফুটফুটে কন্যা শিশুর। এরপর সেখানে চারদিন থেকে গতকাল সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দুপুরে স্বামীর বাড়ি ঘোড়ামারায় ফেরেন তিনি।

রোকসানা ফিরেই দেখেন বাড়ির মূল ফটকে তালা ঝুলছে। ভেতর থেকেও কারো সাড়া পাননি তিনি। চারদিনের নবজাতকসহ সারাদিন বাড়ির উঠানে বসে ছিলেন ওই গৃহবধূ।

পরে বিকেলে রোকসানার শ্বশুর ও শাশুড়ি তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন, গত তিন মাস আগে তালাক দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এটা শুনে উপায়ান্তু না পেয়ে রোকসানা সন্ধ্যার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। ততক্ষণে কোলের নবজাতকটি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রোকসানা ও তাঁর নবজাতকে উদ্ধার করে। পরে তাঁর শ্বশুরবাড়ির কাউকে না পেয়ে পুলিশ তাঁকে সুন্দরগঞ্জের বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, ‘পুলিশ পাঠিয়ে নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে তাঁর বাবার বাড়িতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’