কাদের মির্জার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

শুটারের ছবি ভাইরাল

শুটারের ছবি ভাইরাল

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে আলাউদ্দিন নিহতের ঘটনায় আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। এক মামলায় পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান করে ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। রোববার দুপুরে এ মামলাটি করেছেন গুলিতে নিহত সিএনজি চালক আলাউদ্দিনের ভাই মো. এমদাদ হোসেন। অপর মামলায় আসামি করা হয়েছে বাদল গ্রুপের শতাধিক নেতাকর্মীকে। এদিকে নেট দুনিয়ায় একজন শুটারের ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, ভাইকে হত্যার অভিযোগ এনে এমদাদের পক্ষে আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম মোছলেউদ্দিন নিজামের আদালতে আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করে তার ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন, ছেলে মির্জা মশরুর কাদেরসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল সাপেক্ষে বেলা ৩টায় মামলার শুনানি করেন আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার। তিনি আদালতকে জানান, মামলার প্রধান আসামি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র, ২ ও ৩ নম্বর আসামি তার ছোট ভাই ও ছেলে। তারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় বাদী ১১ই মার্চ মামলা দায়ের করলে ওসি তা গ্রহণ করেননি। ১২ ও ১৩ই মার্চ শুক্রবার ও শনিবার থাকায় ১৪ তারিখে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ৯ই মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি এবং তার ভাই সিএনজিচালক আলাউদ্দিন বসুর হাটে বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খানকে অপমান করার প্রতিবাদে সভায় যান। ওই সভায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার লোক যোগ দেন। সভা চলাকালে আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে অন্যরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এলজি পিস্তল, পাইপগান, লোহার রড ও ককটেল নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আসামি ফখরুল ইসলাম সবুজ, সিরাজিম সালেহীন, সালাউদ্দিন লিটন, আবদুল গনি, ওয়াসিম তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে প্রতিবাদ সভার লোক ও জনপদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা হামলা চালায় এবং জাকির হোসেন জসিম, আরিফুর রহমান, জাকির হোসেন, কেচ্ছা রাসেল, ফিলিপ দাস, রাইসুল ইসলাম তপন, আইয়ুব আলী সমাবেশে ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বাকি আসামিরা ইটপাটকেল ছুড়ে। তাদের হামলায় ২০০-৩০০ লোক আহত হয়। মামলায় বাদী আরো বলেন, এ সময় আমি ও সাক্ষীরা আমার ভাই আলাউদ্দিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই।

এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। নিহতের ছোট ভাই মো. এমদাদ হোসেন আদালতকে জানান, ১১ই মার্চ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামিসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলার এজাহার দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধান আসামি মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নাম বাদ না দেয়ায় শনিবার বিকাল পর্যন্ত পুলিশ এজাহারটি রেকর্ড করেনি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।

মামলার বাদী পক্ষের প্রধান আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার জানান, বাদীর জবানবন্দি ও আইনজীবীর শুনানির পর আদালত এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানায় ইতিমধ্যে কোনো মামলা হয়েছে কিনা বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ওবায়দুল কাদের ও মির্জা কাদেরের ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাতসহ ২৭ জনকে সাক্ষী বানানো হয়েছে বলেও আইনজীবী জানিয়েছেন।

এদিকে, একইদিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গোলাম সারোয়ার বাদী হয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থক ফখরুল ইসলাম সবুজকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২৯শে ফেব্রুয়ারি চর কাঁকড়া টেকের বাজারে চাপরাশির হাটে গুলিবিদ্ধ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার জন্য মির্জা আবদুল কাদেরসহ সঙ্গীরা এম্বুুলেন্সযোগে যাওয়ার সময় তাদের ওপর গুলি, ককটেল হামলা চালানোর অভিযোগে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।