একুশে গ্রন্থমেলা শুরু

একুশে গ্রন্থমেলা শুরু

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ থেকে শুরু হলো বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১। প্রথা অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেড় মাস পর এ মেলা শুরু হবে। আজ দুপুর ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটির ইংরেজি অনুবাদ ‘নিউ চায়না ১৯৫১’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। এবারে মেলার মূল বিষয় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে। মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১১৫টি বই।

মহামারী পরিস্থিতির কারণে এ বছর এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়েই অনিশ্চয়তা ছিল। বলা হচ্ছিল, বইমেলা হবে ভার্চুয়ালি। শেষ পর্যন্ত লেখক-প্রকাশকদের দাবির মুখে আগের মতোই হতে যাচ্ছে এবারের গ্রন্থমেলা। তবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এ বছর ১৫ লাখ বর্গফুটের বিশাল এলাকাজুড়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। থাকছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কড়াকড়ি। মেলায় আগতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবেশ করতে হবে। প্রকাশক, লেখক ও ক্রেতা-পাঠকদের সবার সার্বক্ষণিক মাস্ক পরারও নির্দেশনা রয়েছে। মেলার প্রবেশপথে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে রাখা হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। যারা সঙ্গে মাস্ক আনবেন না, তাদের দেওয়া হবে মাস্ক।

জানা গেছে, এ বছরের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিটসহ মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। গত বছরের মতো এবারও লিটল ম্যাগাজিন চত্বর থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি বা প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের ১টি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে। অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ বইমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় থাকবে ওয়াইফাই সুবিধাও।

এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে মেলায় প্রবেশের নতুন একটি পথ করা হয়েছে। প্রকাশকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রমনা প্রান্তে একটি প্রবেশপথ ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। এবার এটা সম্ভব হয়েছে। সবমিলে সোহরাওয়ার্দীতে ৩টি প্রবেশ ও ৩টি বাহির পথ। প্রত্যেক প্রবেশপথে সুরক্ষিত ছাউনি থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। বিশেষ দিনগুলোয় লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

বইমেলার প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকছে।

এ ছাড়া বৃষ্টির পানি মেলা প্রাঙ্গণ থেকে দ্রুত নিষ্কাষণের ব্যবস্থা থাকবে। লেখক বলছি মঞ্চ ও গ্রন্থ উন্মোচনের স্থান বিশেষভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের ঘর, টয়লেট ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও উন্নত করা হয়েছে। নারীদের জন্য থাকছে সম্প্রসারিত নামাজ ঘর। প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় থাকছে হুইলচেয়ার সেবা। তবে গতবারের চেয়ে বেশি সংখ্যায় হুইলচেয়ার ও স্বেচ্ছাসেবী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি ফুডকোর্ট থাকবে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

এমজে/