সহসা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারছে না ভারত

সহসা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারছে না ভারত

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে ছয় বছর আগে। আর দুই বছর আগে বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) চূড়ান্ত হয়েছে। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সংক্ষিপ্ততম রুটে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনের জন্য রামগড়-সাবব্রুমকে সংযোগকারী ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুও উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু ভারতের পণ্য নিয়মিতভাবে পরিবহনের জন্য বিধিবদ্ধ আদেশ (এসআরও) জারি ও পণ্য পরিবহনের চার্জ নির্ধারণ প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রামগড়ে কাস্টমস স্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কোনো স্থাপনাই গড়ে উঠেনি। এই অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরতো নয়ই, সব কাজ শেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে আরো অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ ভারত শিগগিরই চট্টগ্রাম বা মংলা কোনো বন্দরই ব্যবহার করতে পারছে না।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে ভূমিবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সমুদ্র পথে আমদানি-রফতানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চাচ্ছে। বর্তমানে এই রাজ্যগুলোকে অনেক ঘুর পথে এবং দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল পাড়ি দিয়ে কলকাতার হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করতে হয়। সড়ক পথে কলকাতা থেকে আসাম হয়ে ত্রিপুরার দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। অথচ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রামগড় হয়ে ত্রিপুরার সাবব্রুম পৌঁছতে মাত্র ৭২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সাবব্রুম থেকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু ব্যবহার করে এই রুট চালু হলে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের প্রবেশদ্বারে পরিণত হবে।

২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের সাথে এমওইউ সই হয়। বন্দর ব্যবহারের এসওপি ২০১৯ সালে চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রুটটি ব্যবহার করে একটি পরীক্ষামূলক চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ত্রিপুরা পৌঁছেছে। গত ১০ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ফেনী নদীর ওপর সেতু উদ্বোধন করেছেন, যার নাম দেয়া হয়েছে মৈত্রী সেতু। ১৩৩ কোটি রুপি ব্যয়ে এক দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করেছে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড।

এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেও রামগড়ের দিকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো গড়ে উঠেনি। সেখানে কাস্টমস স্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কোনো স্থাপনা নেই। সেতু নির্মাণের পাশাপাশি এই কাজগুলো এগিয়ে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এখন বলা হচ্ছে, এই সব স্থাপনা নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে সব কিছু অপারেশনালাইজ করতে অন্তত দুই বছর লাগবে। অবশ্য উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এলে এই কাজে গতি সঞ্চার হতে পারে। এ ছাড়া ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক সুষ্ঠুভাবে চলাচলের জন্য খাগড়াছড়িতে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার পাহাড়ি সরু রাস্তা উন্নয়ন করতে হবে। তবে ভারতের দিকে সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে।

তারা বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারাটা ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেলে তা কেবল ভারত নয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।

কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাথে টনপ্রতি দুই টাকা হিসেবে চার্জ নেয়ার কথাবার্তা চলছিল। এটা নিয়ে দরকষাকষি চলছে। চার্জ নির্ধারণ চূড়ান্ত হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

এ ব্যাপারে সম্প্রতি বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি শেষ। এখন আমরা মূলত দুইটি পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি। একটি হলো ভারতের পণ্য নিয়মিতভাবে পরিবহনের জন্য এসআরও জারি। অন্যটি হলো ভারতীয় পণ্য পরিবহনের চার্জ নির্ধারণ। এই চার্জ বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই জন্যই লাভজনক হতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করতে না পারলে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন আমরা কেন করব? এই দর নির্ধারণের কাজ এখনো চলছে। তিনি বলেন, ভারত পণ্য পরিবহন করলে বাংলাদেশের বন্দর, ট্রাক, লোকবল ও বীমা কোম্পানির সেবা গ্রহণ করবে।এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পণ্য পরিবহনের চার্জ নির্ধারণ করা উচিত। আর তা নির্ধারিত হয়ে গেলে আমরা খুব দ্রুতই কাজ শুরু করব।

হাইকমিশনার বলেন, দুই পক্ষের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এই উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহন এ দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশকে এই সুযোগ এনে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ভারতের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে।

এমজে/