সিলেটে কোয়ারেন্টিন থেকে পালাচ্ছে প্রবাসীরা

সিলেটে কোয়ারেন্টিন থেকে পালাচ্ছে প্রবাসীরা

সিলেটে হোটেল কোয়ারেন্টিন থেকে গোপনে পালাচ্ছে বৃটেন প্রবাসীরা। কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যাচ্ছেন বাড়িতেও। কেউ কেউ হোটেল কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে বাইরে বের হয়ে জরুরি কাজকর্ম সেরে নিচ্ছেন। এতে করে বৃটেন থেকে আসা প্রবাসীদের দ্বারা নতুন স্ট্রেইনের করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল সিলেটের আম্বরখানার হোটেল ব্রিটানিয়া থেকে একই পরিবারের ৯ প্রবাসী কাউকে না জানিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষের খবরে টনক নড়ে পুলিশের। রাতে তারা ফের হোটেলে ফিরে এসেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বৃটেনে ছড়িয়েছে নতুন স্ট্রেইনে করোনা।

এই করোনা দ্রুত ছড়ায় এবং আক্রান্তও বেশি হন। এ কারণে বৃটেনের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের দাবি জানানো হয়েছিল বিভিন্ন তরফ থেকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বৃটেনের সঙ্গে সিলেটের আকাশ যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখা হয়। ফ্লাইট চালু থাকায় গত ৫ মাসে বৃটেন থেকে সিলেটে এসেছেন অন্তত সাড়ে ৩ হাজার প্রবাসী।

সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বৃটেন ফেরত প্রবাসীদের সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হোটেল কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এরপর ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে যারা নেগেটিভ হন তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর যারা পজেটিভ হন তাদের সরকারি তত্ত্বাবধানে আইসোলেশনে রাখা হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত পজেটিভ হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। ১৬ জনের মতো বৃটেন ফেরত প্রবাসীর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। ইতিমধ্যে আইইডিসিআরের তরফ থেকে বৃটেন ফেরত প্রবাসীদের নমুনার ‘সিকুয়্যান্স’ মেলানোর পর জানা গেছে প্রবাসীদের দ্বারা নতুন স্ট্রেইনের করোনা সিলেটে ছড়িয়েছে। বর্তমানেও সিলেটে করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহে সিলেটে বেড়েছে করোনার প্রকোপ। দ্রুত আরো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ কারণে করোনার সর্তকতার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রশাসনের তরফ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেটের ১০টির মতো হোটেলে বৃটেন ফেরত প্রবাসীদের রাখা হয়েছে। তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি করা হচ্ছে। প্রবাসীরা কোয়ারেন্টিন পালন করছেন কী না- সেটি দেখছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে ৭ দিন পর হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই নমুনা রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এর বেশি দায়িত্ব স্বাস্থ্য দপ্তর পালন করে না।

এদিকে, বৃটেন ফেরত প্রবাসীদের হোটেল কোয়ারেন্টিন পালন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সিলেটে। অভিযোগ উঠেছে, হোটেলে যথাযথ নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টিন পালন করা হচ্ছে না। বৃটেন ফেরত প্রবাসীরা কোয়ারেন্টিন ছেড়ে চলে আসেন বাইরে। হাঁটাচলা করা ছাড়াও তারা হোটেলের পার্শ্ববর্তী রেস্টুরেন্টেও যাতায়াত করেন। স্বজনরা এলে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেন। এ ছাড়া, রাতের বেলা কেউ কেউ হোটেল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বাড়ি চলে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে গতকাল।

গত ১৮ই মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন জকিগঞ্জের আব্দুল মালিক। ওই ৯ জনসহ মোট ৩৫ জন প্রবাসীকে ওইদিন হোটেল কোয়ারেন্টিনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় নগরীর আম্বরখানাস্থ হোটেল ব্রিটানিয়ায়। এরপর থেকে তারা ওই হোটেলেই কোয়ারেন্টিন পালন করছেন। গতকাল দুপুরের দিকে হোটেল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে যে, বৃটেন ফেরত আব্দুল মালিকসহ তার পরিবারের ৯ সদস্যই হোটেলে নেই। এরপর তারা বিষয়টি পুলিশসহ প্রশাসনকে জানালে তোলপাড় শুরু হয়।

সন্ধ্যায় ব্রিটানিয়া হোটেলের মার্কেটিং অফিসার কাওছার খান গণমাধ্যমকে জানান, তাদের হোটেলে বাইরে কোনো বর্ডার দেয়া হয় না। দোতলা থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত প্রবাসীরাই কোয়ারেন্টিনে থাকে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৬৮ জন প্রবাসী কোয়ারেন্টিনে আছেন। এর মধ্যে ৯ জন পালিয়ে যান। পরে অবশ্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় তারা নিজ বাড়ি জকিগঞ্জে চলে গেছেন। যোগাযোগ করার পর রাতে হোটেলে ফিরে আসেন।

তিনি জানান, প্রবাসীরা নিজ নিজ কক্ষে আছেন কী না- সেটি তো হোটেল থেকেই মনিটরিং করা হয়। আর কেউ বাইরে বের হলে অবশ্যই পুলিশ দেখবে। তার হোটেলের ফটকে পুলিশের ডিউটি থাকার কথা রয়েছে। কেউ বাইরে গেলে দায়দায়িত্ব পুলিশের।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) বিএম আশরাফউল্লাহ তাহের জানান, ওই ৯ জন প্রবাসী কীভাবে হোটেল ছেড়ে বাইরে গেলেন সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের কারো গাফিলাতি থাকলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

হোটেল ছেড়ে ৯ প্রবাসীর চলে যাওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল জানান, হোটেলে বৃটেন ফেরত প্রবাসীরা কোয়ারেন্টিন পালন করছেন কী না সেটি নিশ্চিত করবে হোটেল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। করোনা টেস্টের ফলাফল আসার পূর্ব পর্যন্ত কোনো প্রবাসীর বাইরে বের হওয়ার নিয়ম নেই। কোয়ারেন্টিন যাতে সত্যিকার অর্থে কোয়ারেন্টিন হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।

সিলেটে হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা এক প্রবাসী জানিয়েছেন, নগরীর দরগাহ গেট এলাকার অত্যাধুনিক মানের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিন ছেড়ে প্রবাসীরা প্রায়ই জরুরি কাজে বাইরে বের হয়ে যান। হোটেলে প্রধান ফটকে পুলিশ থাকলেও পেছনের ফটক দিয়ে তারা যাতায়াত করছেন। ব্যাংকসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজকর্ম সেরে পরে তারা হোটেলে ফেরেন। কেউ কেউ রাত ১০টার পর গোপনে বাড়ি চলে যান। আবার সকালে হোটেলে ফিরে আসেন।

এমজে/