পুলিশের সামনেই ব্যবসায়ীকে গুলি করে আ'লীগ নেতা জাপানি হান্নান

পুলিশের সামনেই ব্যবসায়ীকে গুলি করে আ'লীগ নেতা জাপানি হান্নান

রাজধানীর দক্ষিণখানে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নানের শটগানের গুলিতে আবদুর রশিদ (৪২) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। পুলিশের সামনেই ওই ব্যবসায়ীকে জাপানি হান্নান গুলি করেন বলে অভিযোগ করেছেন বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজা।

সোহেল রেজা বলেন, আবদুর রশিদরা দুই ভাই ও দুই বোন। আবদুর রশিদ পরিবারের বড় ছেলে। তিনি একটি মার্কেটের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় আমাকে নিয়ে আমিনুল ইসলাম হান্নানের বাসার সামনে যান আমার মামাতো ভাই নিহত আবদুর রশিদ। গত ২৩ মার্চ কিছু বালু নিয়ে আমিনুল ইসলাম হান্নানের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আবদুর রশিদের। এক পর্যায়ে বালু নিতে চাইলে আমিনুল ইসলাম হান্নান বলেন- আমাকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে এখান থেকে বালু নেওয়া যাবে না। এই কথা শুনে আবদুর রশিদকে নিয়ে আমি বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় হান্নানের বাড়ির সামনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে হান্নান ঘর থেকে বের হয়ে হাতে থাকা শটগান দিয়ে আবদুর রশিদকে গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবদুর রশিদ। তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে দক্ষিণখান কেচি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুর রশিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানার পুলিশ আমিনুল ইসলাম হান্নানসহ প্রাথমিকভাবে সাতজনকে আটক করেছে।

বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজা আরও বলেন, আমি একজন সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এমন ইতিহাস কখনই দেখি নাই। কোনো কথা বলার আগেই হান্নান শটগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করে আমার মামাতো ভাই আবদুর রশিদকে। এমন সময় এলোপাতাড়ি গুলি দেখে আমি ও আমার সঙ্গে থাকা লোকজন পিছু হটি। পুলিশের উপস্থিতি থাকা স্বত্ত্বেও এমন নজিরবিহীন ঘটনা আমি কখনোই দেখিনি। আমি যখন আমিনুল ইসলাম হান্নানের বাসায় যাই তখন আমার সঙ্গে থাকা লোকজনকে চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য বুঝিয়ে-শুনিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা না হয়। আমি ও আমার মামাতো ভাইসহ চার-পাঁচজন আমিনুল ইসলাম হান্নানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই আমিনুল ইসলাম হান্নান হাতে থাকা শটগান দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকেন। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি এর বাহিরে আর কিছু বলতে পারব না।

এই বিষয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম হান্নান অতীতেও দুইবার শটগান দিয়ে মানুষকে গুলি করেছেন এবং এলাকায় ত্রাশ সৃষ্টি করেন। আমিনুল ইসলাম হান্নানের কাছে এলাকার মানুষ জিম্মি। তার কথার বাহিরে কথা বলার সাহস নেই কারও। তিনি সব সময় এলাকাবাসীকে নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এলাকার মানুষ চায় আমিনুল ইসলাম হান্নানের কঠিন বিচার হোক। যাতে করে এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে হান্নান কী করে গুলি করেন আমাদের ভাবতেও অবাক লাগে। হান্নানের হাত এত লম্বা যা বলার মতো না। সব সময় তিনি কিছু হলুদ সাংবাদিক ও দুষ্কৃতকারী পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাখেন। যাতে করে তার কোনো অপরাধের তথ্যচিত্র না তুলে বা কেউ যেন মুখ খুলতে না পারে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের দক্ষিণখান জোনের এসি বিপ্লব গোস্বামী বলেন, এ ঘটনায় হান্নানসহ ৭ জনকে আমরা আটক করেছি। ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা হান্নানের গাড়ি ও বাড়িতে ভাংচুর করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোহেল রেজা ও হান্নানের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা ছিল। চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শটগান দিয়ে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়েন হান্নান।

এর আগে জাপানি হান্নান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফেসবুক লাইভে এসে উত্তেজিত জনতার হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কাছে সহযোগিতা চান। ফেসবুক লাইভে তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিপক্ষরা ক্ষতিসাধন করার জন্য তার বাড়ি ও গাড়িতে হামলা করেছে।

উল্লেখ্য, আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নান তার ফেসবুক আইডিতে নিজেকে জাপান বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার মহাসচিব ও বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন।