কাস্টমস কমিশনারের পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

কাস্টমস কমিশনারের পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট, ঢাকা-১ এর কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামের পাঁচ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৪ টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও নিজের নামে এসব অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন এই কর্মকর্তা। শফিকুল ও তার স্ত্রী মাহবুবা ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকের করা পৃথক মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৬ সালের ৯ আগস্ট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট, সিলেটের কমিশনার হিসাবে যোগ দেন মো. শফিকুল ইসলাম। সূত্রমতে এরপর থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন শুরু করেন। অবৈধ টাকায় স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের নামে ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেস কেনেন। গড়ে তুলেন সম্পদের পাহাড়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকায় বদলি করা হয় তাকে। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক সিলেটের উপপরিচালক মো. নুর-ই-আলম। এক বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে দুটি মামলার চার্জশিট আদালতে দেওয়া হয়। মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে ২২ ও ২৩ মার্চ চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা নুর-ই-আলম। দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) এবং মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় চার্জশিটগুলো দেওয়া হয়। বলা হয়, তদন্তে এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুটি চার্জশিটের অনুলিপি হাতে এসেছে।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, শফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৮ জুন দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৭ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। তদন্তকালে শফিকুল ও তার ছেলেমেয়ের নামে মোট ৫২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার স্থাবর ও এক কোটি ৫১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭২ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খাতে মোট ৩২ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৮ টাকা খরচ করেছেন। সর্বমোট তিনি দুই কোটি ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ১৯০ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে এক কোটি ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি এবং ৭১ লাখ ৮৪ হাজার ২১৫ টাকা মূল্যের অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন এবং নিজের ছেলের নামে ৮৬৮.৫ শতাংশ জমি কিনলেও সম্পদ বিবরণীতে তা গোপন রাখেন। অর্থাৎ শফিকুল মোট এক কোটি ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

অন্য চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মাহবুবা ইসলাম ২০১৮ সালের ২৮ জুন সম্পদ বিবরণী জমা দেন। এতে এক কোটি ১০ হাজার টাকার স্থাবর ও দুই কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ১১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। তদন্তকালে তার নামে এক কোটি ৮১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৬ টাকার স্থাবর ও দুই কোটি ৪১ লাখ দুই হাজার ৪১২ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য খাতে মোট ১৪ লাখ সাত হাজার ১৫১ টাকা খরচ করেছেন। সর্বমোট তিনি চার কোটি ৩৬ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে চার কোটি চার লাখ ৮১ হাজার ২৬৯ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি। তিনি ৯৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৯ টাকা মূল্যের অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন।

স্বামীর অবৈধ উপার্জনের টাকা বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের নামে ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্পেস কেনেন এবং ডেভেলপার কোম্পানিকে বিভিন্ন মানি রিসিটে টাকার পরিমাণ কম দেখিয়ে দলিল তৈরি করেন। অর্থাৎ শফিকুলের স্ত্রী মাহবুবার নামে মোট চার কোটি চার লাখ ৮১ হাজার ২৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। স্ত্রী, সন্তানসহ নিজের নামে সর্বমোট পাঁচ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এ ব্যাপারে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট, ঢাকা-১ এর কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম নিজের ও স্ত্রীর নামের সব সম্পত্তি রিটার্নভুক্ত বলে কাছে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, দুদকের দেওয়া চার্জশিট মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এগুলো আইনিভাবে মোকাবিলা করব।

এমজে/