আজ মহান স্বাধীনতা দিবস

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস

আজ ২৬ মার্চ, আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাখো শহীদের জীবন আর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের শপথ হোক গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের। এ দিনে বিশ্ব মানচিত্রে দেশমাতৃকার স্বাধীন সত্তা প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর আমাদের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী। হাজার বছরের শোষণ, বঞ্চনা ও পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এদিনে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু করেছিলেন।

ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে সেদিন থেকে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত পরিণতি। সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের গৌরব ও অহঙ্কারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন আজ।

আমাদের জাতীয় জীবনের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের মহান এই স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের জন্যই পরিকল্পিতভবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত এই বর্বর হামলায় ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, আরমানিটোলা ও পিলখানায় নির্মম গণহত্যা চালায়। অসহায় নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করায় বিপন্ন মানুষের আর্তচিৎকার সেদিন আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলেও হানাদার বাহিনীর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। মুহুর্মুহু গোলাবারুদের বিস্ফোরণে রাজধানী ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এই কঠিনতম অবস্থায় জাতিকে কোনো দিক-নির্দেশনা না দিয়েই ৭০’র নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। দেনদরবার চলে সংসদ অধিবেশন ও ক্ষমতার।

হানাদারদের হামলায় মুহূর্তের মধ্যেই নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে জনগণ। এমনি এক অনিশ্চয়তা ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের মানুষ যখন বাকরুদ্ধ, হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যর প্রহর গুনছে, জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচবে নাকি জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করবে-বুঝে উঠতে পারছে না। আশা দেবার, ভরসা দেবার, সান্ত¡Íনা দেবার যখন আর কেউ এগিয়ে আসছে না, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঠিক এমনি এক অমানিশার ঘোর অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝলসে উঠলো প্রকৃতি ও মানুষ। বাতাসের প্রতিটি তরঙ্গে কান পেতে সবাই শুনলো -‘উই রিভোল্ট’ আমি মেজর জিয়া বলছি। হানাদারদের প্রতিরোধের মশাল জ্বলে ওঠে চট্টগ্রামের ষোল শহরের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের প্রাণপ্রিয় নেতার ডাকে। একমাত্র আল্লাহকে ভরসা করে এবং নিজের ও সহকর্মীদের জীবনকে বাজি রেখে সমগ্র ব্যাটালিয়নের কর্তৃত্ব নিজ হাতে গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ জিয়া জানিয়ে দিলেন যে, তারা এই মুহূর্ত থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন এবং স্বদেশকে স্বাধীন করার জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। এই ঘোষণার মুহূর্তটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। ২৬ মার্চ সেই ঘোর অমানিশার মধ্যে, অত্যন্ত আকস্মিকভাবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদয় হলেন জিয়াউর রহমান, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে। বেতার কেন্দ্রের কর্মীদের সহযোগিতায় তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা উচ্চারণ করলেন। এই ঘোষণাই স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা।

চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি দেশের প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট এবং লিবারেশন আর্মির কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন.....আমি মেজর জিয়া প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট এবং লিবারেশন আর্মির কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। তিনি এ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান।

জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। পাশাপাশি গোটা দেশ আজ মেতে উঠবে স্বাধীনতার উৎসবের আমেজে। কিন্তু এবারে এমন এক অস্বাভাবিক পটভূমিতে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এসেছে যখন ফ্যাসিবাদী এক শক্তি ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনের পর দেশে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, পাইকারী গ্রেফতার অবাধে চলছে। সীমাহীন দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অপশাসন, উৎপীড়নে আজ সকল সুবচন নির্বাসিত। ভোটাধিকারসহ প্রায় সকল সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার হারিয়েছেন দেশবাসী। ৫ জানুয়ারি কলঙ্কিত নির্বাচনের পর থেকেই দেশে চলছে একদলীয় শাসন। স্বাধীনতা দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি মহাসচিব পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। আজ সরকারি ছুটি।

বিএনপির কর্মসূচি:

দেশে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং ইতিপূর্বে ঘোষিত কর্মসূচিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ শুক্রবার বিএনপির কর্মসূচি :

আজ শুক্রবার সকাল ৬টা : দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।

সকাল ৮-৩০ মিনিট : সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্যবৃন্দ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বেলা ১১-৩০ মিনিট : বিএনপির পক্ষ থেকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বেলা ৩-০০ মিনিট : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। প্রধান অতিথি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান বক্তা-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতি-জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আলোচক-জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ। দেশব্যাপী জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসহ সকল ইউনিটে স্ব স্ব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, স্থানীয় স্মৃতিসৌধে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় বিএনপির ভার্চুয়াল আলোচনায় সংযুক্ত থাকবেন।