মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৫ জন নিহত, আহত অর্ধশত

মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ৫ জন নিহত, আহত অর্ধশত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। হেফাজতের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখি সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জেলা শহরসহ বেশকিছু এলাকা। শনিবার পৃথক পৃথক হামলায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন। পুলিশসহ আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত জন।

নিহতরা হলেন নন্দনপুর হারিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে ওয়ার্কশপের দোকানি জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে শ্রমিক বাদল মিয়া (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারিউড়া মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২), জামেয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী কাউছার (২৪) ও জুবায়ের (২৪)।

তাদের হাসপাতালে আনা হলে সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃত ঘোষণা করেন।

এ ছাড়া আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেয়া হয়।

শনিবার বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুরে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে অবস্থান করে। এ সময় পুলিশ-বিজিব সদস্যরা তাদের ধাওয়া করলে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এ দিকে স্থানীয় এমপির নেতৃত্বে নৈরাজ্য বিরোধী মিছিল থেকে জেলার প্রধান দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালালে মাদরাসার ছাত্রদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শহরের টিএ রোড দিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিলটি জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার এলাকা অতিক্রম করার সময় পেছন দিক থেকে মাদরাসার কয়েকজন ছাত্রকে ধাওয়া করে। এ সময় ছাত্ররাও পাল্টা ধাওয়া করে। তখন অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিছুক্ষণ পর কান্দিপাড়া এলাকা থেকে মাইকে মাদরাসা রক্ষার ঘোষণা দেয়া হলে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পরে ছাত্রলীগকর্মীরা পিছু হটে। ক্ষুব্ধ লোকজন প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাদরাসা এলাকায় থেমে থেমে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ চলছিল।

অন্য দিকে সরাইল উপজেলার অরুয়াইলে স্থানীয়দের বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। এতে ক্যাম্পে থাকা ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের নাম জানা যায়নি। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুলিশ অন্তত ৪০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরাইল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন জানান, বিক্ষোভ মিছিল থেকে হঠাৎ করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আলী আহমেদের ছেলে কাউসার মিয়া, সাইদ মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন (৩৫), আব্দুল সাত্তারের ছেলে বাছির মিয়া (২৮) ও আবদুল হোসেনের ছেলে ছাদের মিয়া (৩৫) হাসপাতালে আনা হয়।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্পটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহল দিচ্ছে বিজিবি, র‌্যাব ও এপিবি বাহিনীর সদস্যরা।

শহরে বিজিবির টহল

এ ঘটনায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য গান কার নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও এবিপিএন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সফরকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেল স্টেশনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল স্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুম অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষ ব্যাপক ভাংচুর করে। সমস্ত মালামাল একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল লাইনের স্লিপার তুলে ফেলে বিক্ষুব্ধরা। সিগন্যাল বক্স ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়াও পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে এবং জেলা পরিষদ, পৌর মুক্ত মঞ্চ, পৌর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুারাল ভেঙ্গে ফেলে। এসব ঘটনায় পুলিশসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আশিক নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি শহরের কাউতলীর দাতিয়ারা গ্রামের সাগর মিয়ার ছেলে। পরে বিক্ষুব্ধরা লাশ নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ করে।