নারায়ণগঞ্জের বিস্ফোরণের দায় নিচ্ছে না তিতাস

নারায়ণগঞ্জের বিস্ফোরণের দায় নিচ্ছে না তিতাস

নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে গ্যাস বিস্ফোরণের দায় এখনই নিতে চায় না তিতাস গ্যাস। তিতাসের কর্মকর্তাদের দাবি, বৈধভাবে নেওয়া ঐ বাড়ির রাইজার লাইনের সংযোগে কোন ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি।

প্রাথমিকভাবে অনেকে দুর্ঘটনাটিকে গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ মনে করলেও, তিতাসের তদন্ত দল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে মাঠে নেমে জানতে পেরেছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ নয়, তিতাস গ্যাসের বৈধ লাইনের চুলার সংযোগ থেকে এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত। তিন মাসের শিশুসহ দুই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে তিতাসের কোনো গাফিলতি নেই বলে দাবি করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে তিতাসের নারায়ণগঞ্জ জোনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিতাসের কর্মকর্তারা জানান, ওই বাড়িতে ২০০৬ সালে বৈধভাবে গ্যাসের লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছিলো।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় তিতাসের নারায়ণগঞ্জ জোনের কর্মকর্তারা তাদের অনুসন্ধান শেষে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে বড় ধরনের তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করছেন।

তিতাসের নারায়ণগঞ্জ জোনের বিপনন বিভাগের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ইমান আলী শেখ জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ওই বাড়ির রাইজার লাইনের সংযোগে কোনো সমস্যা ছিলো না। তবে এটি একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা। এতে বড় ধরনের প্রাণহানী হতে পারতো।

তিনি জানান, ঘরের ভিতর গ্যাসের চুলায় ভাত রান্না হচ্ছিলো। ভাতের ফুটন্ত পানি পরে চুলা নিভে গিয়েছিলো। আমাদের রাইজারে কোন লিকেজ নাই। গ্রাহক প্রান্তের জিআই লাইনে লিকেজ নাই। বাসাটির ১২ ফ্ল্যাট, প্রতিটি ফ্ল্যাটে বৈধ দ্বিমুখী চুলা রয়েছে, ফ্ল্যাট খুবই ছোট, তাতে দুটি পরিবারের ১১ জন জন লোক বসবাস করে। দ্বিমুখি চুলাটি দুই পরিবার শেয়ারে ব্যবহার করে। একটি মুখে ভাত বসানো রয়েছে। বাসাটিতে কোন ভেন্টিলেশন নাই।

তিতাসের পরিচালক অপারেশন্ শফিকুল ইসলাম জানান, ওই দুর্ঘটনায় তিতাসের কোনো গাফিলতি নেই। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রতিবেদন পাবার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।

গ্যাসের ব্যবহারে গ্রাহক বা ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি বিতরণ ও তদারকি সংস্থাগুলো সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এমনকি গ্যাসের ব্যবহারজনিত দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতেও তেমন কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়ে উঠছে না। গ্যাসের ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই খাতের বিশেষজ্ঞরা।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, গ্যাসের চুলার লিকেজে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ লোকজনের মধ্যে শিশুসহ পাঁচজনকে গুরুতর অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিস্ফোরণে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের দুটি দেয়াল উড়ে গিয়ে পাশের ভবনের ছাদে পড়েছে, ভেঙে গেছে ভবনের দরজা-জানালার কাচ।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধরা হলেন- মো. হাবিবুর (৪০), তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৮), তাঁর ছেলে লিমন (১৭), মেয়ে মিম (১৮), তিন মাসের শিশু মাহিরা। দগ্ধ অন্যরা হলেন মো. সোনাহার (৪০), শান্তি আক্তার (৩০), সামিউল (২৫), মনোয়ারা (২২) ও সাথী (২৫)। অপর একজনের নাম জানা যায়নি। আহত লোকজনের বেশিরভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক।