চট্টগ্রামে বন্ধ প্রতিষ্ঠানের নামে কাঁচামাল আমদানি

১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) বন্ধ হয়ে যাওয়া শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে ১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কাঁচামাল আমদানি এবং বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানিও করা হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরকারকে গত চার বছরে এক টাকাও রাজস্ব বা শুল্ককর প্রদান করা হয়নি। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের হিসাব অনুযায়ী চার বছরে প্রতিষ্ঠানটি ওই পরিমাণ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির নাম এ এন্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেড। এর এমডি বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আলম। অভিযোগ উঠেছে, শুধু সরকারি রাজস্ব ফাঁকিই নয়; প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক এশিয়া ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে। ব্যাংকের টাকা মেরে ও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিষ্ঠান মালিক এরই মধ্যে দেশত্যাগ করেছেন বলে বন্ড কাস্টমস সূত্র নিশ্চিত হয়েছে।

সিইপিজেডের ৪ নম্বর সেক্টরের ২৯-৩০ নম্বর প্লটে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এ এন্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেড অবস্থিত। কোম্পানি পরিচালনায় ব্যর্থতাসহ নানা কারণে দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) ও সিইপিজেড প্রতিষ্ঠানটির লিজ চুক্তিও বাতিল করে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালের পর থেকে কোনো অডিট কার্যক্রম সম্পাদন করেনি। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও ২০২০ সাল পর্যন্ত এর বিপরতে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানি হয়েছে। কাস্টমস অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বন্ড সুবিধায় আমদানি করা ফেব্রিক্স ও এক্সেসরিজের (অবৈধভাবে অপসারিত) মোট শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ২৩৩ কোটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭ টাকা। যার শুল্ককরের পরিমাণ ১৪৩ কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার ২২৪ টাকা। অর্থাৎ এ পরিমাণ টাকা সরকার পাবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে দাবিনামা জারি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমান এ এন্ড বি আউটওয়্যার লিমিটেডের নামে ১৪৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার দাবিনামা জারি ও ওই প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে জবাব না দিলে বা দাবি অনুযায়ী সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করা না হলে ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুধু সরকারি রাজস্বই নয়, প্রতিষ্ঠানটি আমদানি-রপ্তানির নামে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, চাক্তাই শাখা ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক শাখা থেকেও বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মালিক নাজমুল আলম দেশত্যাগ করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে।

এমজে/