এক ডিআইজির অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে যাই: আদালতে মামুনুল হক

এক ডিআইজির অনুরোধে বায়তুল মোকাররমে যাই: আদালতে মামুনুল হক

বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ সহযোগিতার জন্য আমাকে ফোন দিয়েছিল। পুলিশের ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) পদমর্যাদার একজনের কথা রাখতে গিয়ে আমি ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে গিয়েছিলাম।

পল্টন থানায় করা মামলায় রিমান্ড শুনানিকালে আজ সোমবার বেলা ১১টায় আদালতের অনুমতি নিয়ে মাওলানা মামুনুল হক বিচারককে এসব কথা বলেন।

মামুনুল হক আদালতে বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ আমি বাংলাবাজার জুমা মসজিদে পুলিশ প্রটেকশনে নামাজ পড়িয়েছি। নামাজ শেষে জানতে পারি বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিরা জড়ো হয়েছে। এরপর একজন ডিআইজির অনুরোধে বায়তুল মোকাররম মসজিদে যাই, সেখানে আমাকে বক্তব্য রাখতে বলা হয়। তারপর ওইখানে আমি বক্তব্য রাখি। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি। ভবিষ্যতে পুলিশ অনুরোধ করলে আমরা তো কোথাও যেতে পারব না।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামুনুল হকের বক্তব্যের বিষয়ে কোর্টকে বলেন, ‘তিনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না।’

তবে আদালত মামুনুলকে বলতে বলেন। মামুনুল আবার বলেন, ‘আপনি (আদালতের বিচারক) চাইলে আমার ওইদিনের কল রেকর্ড চেক করতে পারেন।’ পরে তাঁর জামিন ও রিমান্ড বিষয়ে শুনানি হয়।

শুনানিকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘পল্টন থানার দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় পুলিশ রিমান্ড দাবি করছে। অথচ মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই, মামুনুল হক ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। বাদীপক্ষের কোনো তথ্য সঠিক নয়। বাদী কোন হাসপাতালে ছিলেন তাঁর কোনো তথ্য দেননি।’

এ সময় আইনজীবী রিমান্ডে থাকা আসামির বক্তব্য সংবাদপত্রে প্রকাশ করায় ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর রশীদের সমালোচনা করে বলেন, ‘মাই লর্ড, পুলিশ অফিসাররা আজকাল তদন্ত ও রিমান্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে টেলিভিশনে তথ্য দেওয়া শুরু করেছেন। অথচ একটি মামলার তদন্তের অগ্রগতি একমাত্র তদন্ত কর্মকর্তা এবং জজ সাহেবের জানার কথা। এসব তথ্য তাদের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা। এটা কোনো পুলিশ অফিসারের টেলিভিশনে দেখিয়ে সবাইকে জানানোর কথা না।’ তবে এ বিষয়ে আদালত তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি।

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডব ও চলতি বছরের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমের ঘটনার পৃথক দুই মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী আজ মামুনুল হকের (৩ ও ৪ দিন) সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ মামুনুল হককে পল্টন ও মতিঝিল থানার পৃথক দুটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মামুনুল হককে পল্টন থানার মামলায় চার দিন এবং মতিঝিল থানার মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানায় করা চুরি ও মারধরের মামলায় পরদিন মামুনুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়।

গত ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় ৫ এপ্রিল মাওলানা মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় দুই হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেন।

একই সঙ্গে ২০১৩ সালের মতিঝিল থানার নাশকতা মামলায় মাওলানা মামুনুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ।