করোনাভাইরাস: বিপর্যয়ে পরিবহন শ্রমিকরা, পাশে দাঁড়ায়নি মালিক-প্রশাসন

করোনাভাইরাস: বিপর্যয়ে পরিবহন শ্রমিকরা, পাশে দাঁড়ায়নি মালিক-প্রশাসন

বাংলাদেশের পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, সরকার ঘোষিত লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম বিপর্যয়ে পড়েছেন তারা কারণ একদিকে যেমন তাদের কোন আয় ছিলোনা তেমনি মালিক বা প্রশাসনও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠনগুলো দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে রবিবার।

বাংলাদেশে গত ৫ই এপ্রিল থেকে গণপরিবহন বন্ধ আছে। এর আগে গত বছরেও কয়েক দফা গণপরিবহন বন্ধ করে পরে আবার সীমিত আকারে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সরকার।

এবার গণপরিবহন বন্ধের পর সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার কথা বলা হলেও তা শ্রমিকদের কাছে খুব একটা পৌঁছায়নি।

আবার মালিকরাও এ সময়টিতে তাদের তেমন কোন সহায়তা করেনি বলেই জানিয়েছেন চালক ও শ্রমিকদের অনেকে।

ঢাকা থেকে শেরপুরের একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক মো.সাইফুল ইসলাম বলছেন, আগে তিনি দিন প্রতি ৬০০ টাকা বেতনে কাজ করতেন। কিন্তু গত প্রায় একমাস ধরে তার কাজ নেই। এর আগে গত বছর মার্চ মাসের পর থেকেই নানা সময়ে তাকে কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে।

"আমি দৈনিক ভিত্তিকে কাজ করি। কাজ করল বেতন পাই। আমাদের কোন নিয়োগ দেয়া হয়না। গত লকডাউনে ৭০/৮০ হাজার টাকা লোন করছি। এবার গত এক মাসের বাসা ভাড়া এখনো দিতে পারিনি"।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বলছে, গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৫০ লক্ষ শ্রমিক। এই ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯টা শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। ফেডারেশনের নেতারা বলছেন লকডাউনের সব কিছু খুলে দিলেও শুধু মাত্র গনপরিবহণ বন্ধ রয়েছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, তারা চাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়ার জন্য। অন্যথায় তারা রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি পালন করবেন।

যদিও সরকারের দিক থেকে গণপরিবহন ঈদের আগে চালুর বিষয়েও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে তবে কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

"এখন সবই তো চলছে। যেহেতু সব চলছে সেজন্য পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ । সেজন্যই কর্মসূচি ঘোষণা করতে আমরা বাধ্য হয়েছি," বলছেন ওসমান আলী।

এদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি নাম একটি নাগরিক সংগঠন বলছে, কয়েক লক্ষ গণপরিবহন শ্রমিকের কোন তথ্যভাণ্ডার নেই বাংলাদেশে। ফলে সরকারি বা বেসরকারি ভাবে তাদের কাছে সাহায্য পৌছানো সম্ভব হয়নি এই করোনা মহামারির সময়।

এই সংগঠনের মহাসচিব মোজ্জামেল হক চৌধুরি বলছেন, করোনা কারণে অনেক চালক পেশা বদল করেছেন। এখন অপেশাদার চালক বা সাহায্যকারী দিয়ে গণপরিবহন পরিচালনা করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরো বেড়ে যাবে।

"এ খাতের শ্রমিকরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তাদের বেতন, বোনাস, ওভারটাইম ও কর্মঘণ্টা নির্ধারিত না হলে কেউ তো আসবে না। এর মধ্যেই অনেকে পেশা ছেড়েছে। পেশাদার শ্রমিকরা চলে গেলে অরাজকতা বেড়ে যাবে"।

এদিকে সরকারের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, লকডাউন শেষে এবং ঈদের আগে সড়ক পরিবহন চালু করা হতে পারে।