নাগরিক সমাবেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি

নাগরিক সমাবেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবি

সচিবালয়ে হেনস্তা-নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দুটি পৃথক কর্মসূচি থেকে এই দাবি করা হয়।

রোজিনা ইসলামের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের উদ্যোগে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে নাগরিক সমাবেশ হয়। একই সময়ে জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলাম মন্ত্রীর লুটপাটের কিছু কাহিনি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। এই মন্ত্রী নিজের পিতার নামে মানিকগঞ্জে মেডিকেল কলেজ করেছেন, যার স্বাস্থ্য খাতে এক ফোঁটা অবদান নেই। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অন্যায় আচরণের জন্য মন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।

সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রোজিনাকে আটকে রাখা যাবে না। সরকারের গোপন অনেক জিনিস আছে। সেগুলো বের হলে সরকার আর সরকার থাকবে না। সরকারের সমস্ত গোপন তথ্য বের করা হবে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাক্সিন নিয়ে কত লক্ষ-কোটি ডলার লুট করা হয়েছে, তা আমরা বের করে ছাড়ব। ’

সমাবেশে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় বড় দুর্নীতির প্রতিবেদন রোজিনা জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। এ কারণেই সরকারি আমলারা তাঁকে হেনস্তা করে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আরও বলা হয়, ‘সাংবাদিক রোজিনাকে রাত আটটা পর্যন্ত কেন আটকে রেখেছিলেন, এটা আমাদের প্রশ্ন। অবিলম্বে রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। রোজিনার মুক্তি, সব কালাকানুন বাতিল, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, রোজিনা তথা সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার চোরদের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাকালে একের পর এক দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্য করেছে। এগুলো পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন রোজিনা।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ৫০টার বেশি প্রতিষ্ঠিত অন্যায়ের প্রমাণ রয়েছে। রোজিনা যখন সেগুলোর খোঁজ নিচ্ছেন, তখন লাভবান হচ্ছে জনগণ আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চোরেরা। এই সোজা হিসাব দিয়েই বোঝা যায় যে রোজিনার সঙ্গে হওয়া ঘটনার পেছনে কার স্বার্থ কোথায়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার একটাই কারণ। সেটা হলো সাংবাদিক সমাজকে বার্তা দেওয়া যে দেশে আর কোনো সাংবাদিকতা করা যাবে না। সংবাদ হবে ‘প্রেসনোট’ আর জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বিজ্ঞাপন। এটাই বর্তমান সরকারের মনোবাসনা।
ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক নুরুল হক বলেন, বর্তমান সরকার কোনো কিছুরই পরোয়া করে না। কারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।

এই নাগরিক সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, সাদেক আহমেদ খান ও ইশতিয়াক আজিজ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

একই সময়ে হওয়া ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে হওয়া সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেতা জামশেদ আনোয়ার, অ্যাকটিভিস্ট জীবননান্দ জয়ন্ত, যুব ইউনিয়নের নেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা নাসির উদ্দিন প্রমুখ।

এমজে/