ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছাত্রলীগ নেতার

ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছাত্রলীগ নেতার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের কীভাবে মৃত্যু, তা চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন৷

তিনি এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নিখোঁজের আট দিন পর গতকাল রোববার হাফিজুরের লাশ শনাক্ত করে পরিবার।

এর প্রতিবাদে সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সাদ্দাম। হাফিজুরের সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘হাফিজ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই’।

আট দিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র হাফিজুরের লাশ শনাক্ত করে পরিবার। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দায়ের কোপে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন তিনি।

হাফিজুর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

১৫ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় ফেরেন তিনি। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।

হাফিজুরের ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করে ডাকা মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সাবেক ডাকসু নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হাফিজুর রহমানের ঘটনাটি আমাদের সবাইকে আপ্লুত করেছে। তার পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। তাদের পাশে আমরা আছি। হাফিজুর রহমানের ঘটনার যেন ন্যায়বিচার হয়, যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয়, পূর্বাপর কী ঘটেছে না ঘটেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে সেটি যেন উন্মোচন করা হয়, এসব বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে।’

সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ করেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সাত-আট দিন ধরে হাফিজুর রহমানের লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে রাখা ছিল। এই সাত-আট দিনের ঘটনাক্রম আমাদের কয়েকটি প্রশ্নের সামনে নিয়ে আসে। হাফিজুরের গায়ে ডাকসুর লোগো লাগানো টি-শার্ট ছিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানায় তার নিখোঁজের জিডি করা হয়েছে, শাহবাগ থানাকে অবহিত করা হয়েছে, অথচ ঘটনার কোনো ফয়সালা করা যায়নি। শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে জিডি করতে গেলে পুলিশ এটি মিলিয়ে দেখার মতো পেশাদারত্ব দেখাতে পারেনি যে কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাওয়া লাশটি নিখোঁজ হাফিজুর রহমানের হতে পারে। একটি পেশাদার ও দায়িত্বশীল বাহিনী হিসেবে তাদের সামনে আসা উচিত ছিল। আমরা দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, এই ঘটনায় দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ পেশাদারত্বের পরিচয় দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

সাদ্দাম বলেন, আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি৷ যাদের সঙ্গে সেদিন হাফিজুর আড্ডা দিয়েছিল, অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

সমাবেশে বক্তারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. হাফিজুরের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের এবং মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।

২. ঘটনার আগমুহূর্তে হাফিজুরের সঙ্গে যে বন্ধুরা ছিল, তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনতে হবে।

৩. হাফিজুরের লাশ নিয়ে পুলিশ সদস্য ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে দায়িত্বে অবহেলার জবাব দিতে হবে।

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কী পদক্ষেপ নেবে সেই নকশা প্রকাশ করতে হবে।

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মিফতাহুল ইসলাম পান্থ। বক্তব্য রাখেন মাইম একশনের সভাপতি লিজাইনুল ইসলাম রিপন, ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কোহিনূর আক্তার রাখি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার লাবণ্য, ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের সভাপতি তানজীম আল আলামিন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ নোমান, সাবেক সহসভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাড সোসাইটির সভাপতি তানজির আল ফারাবীসহ অনেকে।

এমজে/