আলোচিত বক্তা আমির হামজা গ্রেফতার

আলোচিত বক্তা আমির হামজা গ্রেফতার

আলোচিত ইসলামী বক্তা মুফতি আমির হামজাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি টিম।

সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়ার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, মুফতি আমির হামজার বিরুদ্ধে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে তদন্তাধীন একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তাকে সিটিটিসি কার্যালয়ে আনা হচ্ছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা ও উগ্রবাদ ছড়ানোর বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, মুফতি আমির হামজা ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে প্রকাশিত তার বেশকিছু বক্তব্য উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। যা শুনে কোমলমতি কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ৫ মে সংসদ ভবন এলাকা থেকে তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টায় সাকিব নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সাকিবকে গ্রেফতারের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সাকিবসহ আলী হাসান ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে আসামি করা হয়।

এছাড়া সাকিবের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাকিবের মোবাইলে আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদ সংবলিত ভিডিও পাওয়া যায়। যা দেখে সে উগ্রবাদে আসক্ত হয়।

এর আগে গত ১৫ মে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানিয়েছিল, তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টাকারী সাকিব নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক জানায়, এক ইসলামী বক্তার নির্দেশে সে এই পরিকল্পনা করেছিল। কয়েকজনের ওয়াজ ও বক্তব্য শুনে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয় বলে জানায় সে।

বিশিষ্ট ওয়াজিন মুফাসসিরে কোরআন মুফতি আমির হামজাকে সাদা পোশাকে প্রশাসনের পরিচয়ে তার গ্রামের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবার।

সোমবার বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয় থানাধীন পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের ডাবুরাভিটার নিজ বাড়ি থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়।

এ ব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও ইবি থানা পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে।

সোমবার বিকেল ৫টার দিকে আমির হামজা তার নিজ বাড়িতে গেলে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার পারিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা তাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাকে ঢাকার স্পেশাল টিম আটক করেছে কি না সে বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

মুফতি আমির হামজার দাদা জান মোহাম্মদ জানান, আমির হামজা আজকেই যশোর থেকে বাড়িতে তার মা-বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিল। সে সময় প্রশাসনের পরিচয়ে তাকে নিয়ে গেছে।

মুফতি আমির হামজার স্ত্রী তামান্না সুলতানা জানান, বিকেল ৫টার দিকে আমার শ্বশুর বাড়িতে ছয় থেকে সাতজন সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরা ব্যক্তি প্রবেশ করে। কোনো কিছু বলার আগেই তাকে হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে কালো একটি হাইচ গাড়িতে তোলেন। পরে ওই পোষাকধারীরা গাড়িতে উঠে তাদের কালো পোষাকটি গায়ে দিয়ে গাড়ি টান দেন। তাদের কাছে রাইফেলসহ অস্ত্র ছিল বলে তিনি জানান। তিনি তার স্বামীকে উদ্ধারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের রিয়াজ সর্দারের ছেলে।

এ ব্যাপারে পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফর আলী জানান, আমি লোকে মুখে শুনেছি কে বা কারা মুফতি আমির হামজাকে ধরে নিয়ে গেছে। তাছাড়া কিছুই বলতে পারবো না।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। একই কথা বলেছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

মুফতি আমির হামজা বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আকিজ গ্রুপের ঢাকার মসজিদের খতিবের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।