৬৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা যাবে ঋণের সুদ পরিশোধে

৬৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা যাবে ঋণের সুদ পরিশোধে

প্রতি বছরই বেড়ে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধের ব্যয়। বলা চলে, ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে জাতীয় বাজেট। বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে ঘাটতি। আর এ ঘাটতি মেটাতে নিতে হচ্ছে ঋণ। এতে প্রতি বছরই ঋণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ঋণের সুদ। আবার এ সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে ঋণ নিয়ে। আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বেশির ভাগ অর্থাৎ ৬৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধে। এ সুদ ব্যয় অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদব্যয় একক খাত হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত ছিল। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরে ঋণ পরিচর্যা বাবদ সুদব্যয় বাড়ছে পাঁচ হাজার ১০ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৮ শতাংশ।

করোনার বৃত্ত ভাঙার স্বপ্ন!

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এই ভাবে সুদের ব্যয় বাড়তে থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সংকোচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন বাজেটের মধ্যে শুধু ঋণের সুদই ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। আর সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা মিলে পরিশোধ করতে হবে ৬৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা; যা গত বছরে ছিল ৬৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। সরকারি কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও ঋণের সুদ মিলে ব্যয় হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা; যা রাজস্ব বাজেটের প্রায় ৩৮ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা জানান, গত পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বেড়েছে শতভাগের বেশি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে সুদব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা জানান, চলতি অর্থবছরে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ে বিশাল অঙ্কের অর্থাৎ তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ঘাটতি বাজেট দেয়া হয়েছে প্রায় দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এ ঋণের মধ্যে ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা, আর বিদেশী ঋণ নেয়া হবে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে প্রায় সাড়ে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এবার করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমদানি-রফতানিতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে যে ক্ষত দেখা দিয়েছে তা সারতে দীর্ঘ দিন লেগে যেতে পারে। ফলে চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন থেকে কঠিনতর হতে পারে। আর এটা হলে সরকারের ব্যয় ঠিক রাখতে আগামী অর্থবছর শেষে ব্যাংকঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে সুদব্যয় আরো বাড়বে।

এমজে/