ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্ট

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশসহ কিছু দেশে লকডাউন

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশসহ কিছু দেশে লকডাউন

করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া এক ধরনের লকডাউনে (সাম ফর্ম অব লকডাউন) যাচ্ছে। একই সঙ্গে পর্তুগালের কিছু অংশে লকডাউন দেয়া হচ্ছে। এমনকি যে ইসরাইলে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষকে পুরোপুরি টিকা দেয়া হয়েছিল, সেখানে আবার আবদ্ধ পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ভয়েস অব আমেরিকা।

উল্লেখ্য, এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথমে শনাক্ত করা হয় ভারতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, তা এখন বিশ্বের কমপক্ষে ৮৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস শুক্রবার সতর্ক করে বলেছেন, এ পর্যন্ত যত ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা রাখে এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। আর তা যেসব জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া হয়নি, তাদের মধ্যে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ভয়েস অব আমেরিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য জাতীয় পর্যায়ে লকডাউনে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এ সময়ে লোকজনকে শুধু চিকিৎসার প্রয়োজনে বাসার বাইরে যেতে অনুমোদন দেয়া হবে।

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিডনি। শনিবার থেকে সেখানে দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছে। সেখানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের পর সিডনিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে প্রথম লকডাউন দেয়া হয়। সেখানে নিউ সাউথ ওয়েলস সহ অন্য এলাকাগুলোতে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস হলো অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য।

ওদিকে অস্ট্রেলিয়ায় করোনা বৃদ্ধির কারণে সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডে সফরকারীদের জন্য নতুন নিয়ম করেছে নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে কেউ সফর করলে তাদের জন্য কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু করোনার কারণে নিউজিল্যান্ড এই নিয়ম স্থগিত করেছে। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া থেকে কেউ নিউজিল্যান্ডে গেলে তিনদিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

রাশিয়ায়ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইন্ট পিটার্সবুর্গে আগামী শুক্রবারে ইউরো ২০২০ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনাল হওয়ার কথা। কিন্তু শনিবার সেখান থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, এক দিনে ওই শহরে করোনায় মারা গেছেন ১০৭ জন। করোনা মহামারি শুরুর পর এটাই ওই শহরে একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড।

আফ্রিকাজুড়ে এই ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সেখানে ডেল্টা ভাইরাসের কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অব খাওজুলু-নাতালের গবেষণা বিষয়ক পরিচালক, ভাইরাস বিশেষজ্ঞ তুলিও ডি ওলিভেইরা বলেছেন, সংক্রমণের সংখ্যা খুবই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমরা এখন মহামারির সূচকীয় দফায় রয়েছি। ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্সের সদস্যরা বিক্ষোভ করেছেন ২৫ শে জুন। তারা দেশে করোনার টিকা কর্মসূচিতে রাশিয়া ও চীনের টিকা অন্তর্ভুক্তির দাবি করেছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আবার নিজস্ব একটি ভ্যারিয়েন্ট আছে। তার নাম ডেল্টা প্লাস। এরই মধ্যে ভারত সহ কমপক্ষে এক ডজন দেশে এর আবির্ভাব ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন কর্তৃপক্ষ এই ভাইরাস ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমণশীল বলে আশঙ্কা করছে। এরই মধ্যে নতুন স্ট্রেইন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।

শনিবার জন্স হপকিন্স করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টার রিপোর্ট করেছে যে, বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৮ কোটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ। এরপরেই রয়েছে ভারত। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ১ লাখ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৮৩ লাখ।

এমজে/