বিনা দোষে জেল খাটা সেই মিনু’র দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘিরে রহস্যের জট

বিনা দোষে জেল খাটা সেই মিনু’র দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘিরে রহস্যের জট

তিন বছর জেল খেটে বের হওয়ার মাত্র তেরো দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাটি নিছকই সড়ক দুর্ঘটনা কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মিনু আক্তার-এর পরিবারের সদস্য ও তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা।

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুমের পরিবর্তে তিন বছর ধরে জেলের ঘানি টানছিলেন মিনু আক্তার। নানা ঘটনায় গত ১৬ জুন কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও গত ২৮ জুন ভোর রাতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ভাটিয়ারি লিংক রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু। ঘটনার পাঁচ দিন পর শনিবার (৩ জুলাই) পুলিশের দেখানো ছবি দেখে নিহত বোনকে শনাক্ত করেন মিনু'র ভাই রুবেল।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেছেন, মাত্র ১৩ দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এতোদিন তো ভালোই ছিলেন। হঠাৎ এমন কী হলো যে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন?

আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, মিনু আক্তার-এর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সদস্যদের সংগে কথা বলেছেন তিনি। তারা জানিয়েছেন, মিনু আক্তার-এর ছেলে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তাঁকে আনতেই ২৮ জুন দিনের বেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর ফেরেননি তিনি।

এই আইনজীবী বলেন, তাঁর মৃত্যু রহস্যজনক। তাঁর তো মেইনরোডে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি ওখানে কীভাবে গেলেন?

তাঁর অভিযোগ, মিনু আক্তার-এর মৃত্যুর পরদিনই তাঁর মৃতদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে পুলিশ। কিন্তু তাঁর বিনা অপরাধে জেল খাটা এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রচারের কারণে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন মিনু আক্তার। তাঁর মৃতদেহ কীভাবে বেওয়ারিশ হয় সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

২০০৬ সালে এক গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যার মামলায় বিনা দোষে তিন বছর কারাভোগ করেছিলেন মিনু আক্তার। এরপর চলতি বছর বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে তা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়।

পুলিশ বলছে, মিনু আক্তার সড়ক দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবেই মারা গেছেন। তাঁর শরীরে দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কোন আঘাতের চিহ্ন ছিলো না।

চট্টগ্রামের বায়োজিদ বোস্তামী থানার এসআই খোরশেদ আলম জানান, গত ২৮ জুন রাতের পেট্রোলে ছিলেন একই থানার আরেক এসআই মোহাম্মদ নূরনবী। তিনি প্রায় রাত সাড়ে চারটার দিকে খবর পান যে, ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর লাশ দেখতে পান।

তিনি বলেন, গাড়ি ধাক্কা দিলে যে ধরনের আঘাত থাকে সেই রকমের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তাঁর শরীরে অন্য কোন আঘাত নেই। আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হয়েছে, গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেওয়ার পর টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেছে। সেই রকমের চিহ্ন রয়েছে।

পরে মিনু আক্তার-এর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশের দাবি, ২৯ জুন পর্যন্ত তাঁর কোনো পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে তাঁকে দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।

এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন এসআই খোরশেদ আলম। পরে তদন্তের এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন, তাঁর নাম মিনু আক্তার, যিনি একটি মামলায় আসামি না হয়েও তিন বছর জেল খেটেছেন। নিহত মিনুর ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন তার ভাই।

এসআই আলম জানান, মিনু'র বাবা-মা কেউ নাই। তবে তাঁর এক ভাই আছে। স্বামী না থাকলেও দুই ছেলে রয়েছে মিনু'র।

তিনি বলেন, মিনু মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তারা। মিনু আক্তার-এর পরিবারের পক্ষের আইনজীবী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।