আইসিইউ, অক্সিজেন সংকটে প্রতিদিন মৃত্যুর নতুন রেকর্ড

আইসিইউ, অক্সিজেন সংকটে প্রতিদিন মৃত্যুর নতুন রেকর্ড

দেশের শতকরা ৫২ ভাগ কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ নেই৷ সংক্রমণ বেড়ে আর অক্সিজেন সংকটে প্রায় প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে৷

পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর লকডাউন আরো সাত দিন বাড়ানো হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া লকডাউন বুধবার শেষ হওয়ার কথা ছিল৷

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ কমাতে না পারলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়বে৷ কারণ যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে সেই হারে কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়৷

২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ ১৬৪ জন মারা গেছেন৷ গত ১০ দিন ধরে মৃত্যু ১০০ জনের উপরে রয়েছে৷ ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৬৪ জন৷ শনাক্তের হার ২৯.৩০ ভাগ৷

দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে ১০০টি সরকারি হাসপাতাল নির্ধারিত আছে৷ কিন্তু এই হাসপাতালের ৪৮টি হাসপাতালে আইসিইউ আছে, ৫২টিতে নেই৷ আইসিইউ সুবিধা নাই এমন হাসপাতালের ৩৫টিই আবার ঢাকার বাইরের জেলা সদরগুলোতে৷ আর এখন সংক্রমণ সারাদেশে সমানভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে৷ ফলে ঢাকার বাইরের জেলা এবং গ্রামের করোনা চিকিৎসা বেশি সংকটের মধ্যে আছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন খুলনা বিভাগে ৫৫ জন৷ ঢাকা মারা গেছেন ৪৪ জন৷

এদিকে ঢাকার ১৬টি সরকারি কোভিড হাসপাতালের আটটিতেই কোনো আইসিইউ বেড খালি নাই৷ বাকি আটটিতে একটি থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি বেড আইসিইউ বেড খালি আছে৷

অক্সিজেন সংকটের কারণে সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় মোট ১৭ জন করোনা রোগী মারা গেছেন৷ পাবনায়ও একজন মারা গেছেন রোববার৷ বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ৩৫ জেলায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আছে৷ দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বাকি জেলা এবং দেশের উপজেলায় অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নাই তারা চাইলেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না৷ সময় লাগছে৷ আর উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল৷ তাই দেশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকলেও রোগীরা তাদের প্রয়োজনে অক্সিজেন পাচ্ছেন না৷’’

একই কথা বলেন বিএসএমইউ এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকট দেখা দিয়েছে৷ সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়ার কারণ সময়মত অক্সিজেন না পাওয়া৷ তাই হাসপাতালগুলোতে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আইসিইউ সংকট আছে, তবে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা৷ কারণ আইসিইউতে রোগীকে নেয়া হয় শেষ পর্যায়ে৷ আর আগে যদি রোগীকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া যায় তাহলে আইসিইউ'র ওপর চাপ কমবে৷ আইসিইউতে যাওয়ার পর খুব কম রোগীই ব্যাক করেন৷ তাই রোগীকে যাতে আইসিইউতে না যেতে হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷’’

অবশ্য সবার আগে দরকার সংক্রমণ ঠেকানো৷ সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তার সঙ্গে চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো সম্ভব নয়৷ অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বলেন, আইসিইউ রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয় ৷ এর সাথে অনেক কিছু জড়িত৷ আর ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার কারণেই চিকিৎসার ওপর চাপ বাড়ছে৷ তাই সংক্রমণ কমাতে সত্যিকার অর্থে কঠোর লকডাউন দরকার৷ কিন্তু এখন লকডাউন তো হাফ লকডাউন হয়ে গেছে৷ তাই লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে৷ সর্বোপরি যেভাবেই হোক দ্রুত গণটিকা শুরু করতে হবে৷’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের জুনে একনেকের বৈঠকে দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট, ভেন্টিলেটর ও উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা (হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা) গড়ে তোলার নির্দেশ দেন৷ যন্ত্রপাতিও কিনতে বলেন৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি৷

ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘করোনার চিকিকিৎসা নিয়ে আসলে পরিকল্পিত কোনো কাজই হয়নি৷ এই সময়ে যদি কিছু প্রশিক্ষিত লোকও তৈরি করা হতো তাহলে অক্সিজেনসহ নানা সংকট সামাল দেয়া যেত৷’’