নারায়ণগঞ্জ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ দাবি ৩৬ বিশিষ্ট নাগরিকের

নারায়ণগঞ্জ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ দাবি ৩৬ বিশিষ্ট নাগরিকের

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও হতাহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ৩৬ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, এ পর্যন্ত ৫২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন অসংখ্য আহত হয়েছেন এবং এখনও অগণিত নিখোঁজ রয়েছেন বলে গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা গেছে। আমরা এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যাক্তিদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ‘অগ্নিকাণ্ডের দায় কি আমার’ শীর্ষক যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে আমরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বের হয়ে আসতে চাইলে বহির্গমনের পথ তালা বন্ধ দেখতে পায় এবং ছাদে প্রাণ বাঁচানোর জন্য যাওয়ার সময়ও দুটো সিঁড়ির একটি বন্ধ দেখতে পায়। কারখানার ভেতর বিভিন্ন অতি দাহ্য পদার্থ মজুত থাকা এবং জরুরি অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না রাখা সত্বেও এভাবে অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকদের বন্দী অবস্থায় রাখা একটি অমানবিক, চুড়ান্ত দায়িত্বহীন এবং সীমাহীন গাফিলতিমূলক কাজ এবং এটি হত্যাকাণ্ডের সামিল বলে আমরা মনে করি।

বিবৃতিতে বলা হয়, নিহত এবং আহতদের মধ্যে অনেক শিশু থাকার কারণে এটিও স্পষ্ট যে শ্রম আইনে কল কারখানায় শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে যে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে এখানে তাও মানা হয়নি। আমরা এসব প্রতিটি অপরাধের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী সকলের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিহত শ্রমিকদের সনাক্ত, হতাহত শ্রমিকদের জন্য যথাযথ চিকিৎসা, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পূনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইতিপূর্বে তাজরীন, রানা প্লাজা, টাম্পাকোসহ বিভিন্ন কারখানায় এ ধরনের শোচনীয় ঘটনার বিচার না হওয়ায় এবং সরকারী তদারকী ব্যবস্থার অভাবে রূপগঞ্জের হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটছে। এই হত্যার দায় তাই সরকার ও তার কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর এড়াতে পারে না বলে আমরা মনে করি।

মুনাফালোভী মালিক প্রচলিত আইন অনুসারে শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধান না করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ইচ্ছেমত কারখানা চালু রেখে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মালিকদের এ আচরণকে আমরা ধিক্কার জানাই। সেইসাথে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পরিদর্শন ও তদারকীমূলক দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার এবং সরকারকে সামগ্রিকভাবে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিদাতারা হলেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে. চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক স্বপন আদনান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ড. নাসরিন খন্দকার, সায়েমা খাতুন, গবেষক ড. নোভা আহমেদ, এ্যকটিভিষ্ট সাদাফ সাজ সিদ্দিকী, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, মানবাধিকার কর্মী শারমীন মুরশিদ, শিরিন প হক, সঞ্জীব দ্রং, ড. ফষ্টিনা পেরেরা, নূর খান লিটন, জাকির হোসেন, আইনজীবী তবারক হোসেইন, ডা. নায়লা জেড খান, নাসের বুখতিয়ার ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম।