ঈদ পরবর্তী বিধিনিষেধেও কারখানা চালাতে চায় পোশাকশিল্প মালিকেরা

ঈদ পরবর্তী বিধিনিষেধেও কারখানা চালাতে চায় পোশাকশিল্প মালিকেরা

ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধেও কারখানা চালু রাখতে চান তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের মালিকেরা। এ জন্য সামগ্রিক অবস্থা ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

রাজধানীর গুলশানে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পিআর অ্যান্ড মিডিয়া কার্যালয়ে বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও সিদ্দিকুর রহমান, বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান এম শাহদাৎ হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টন্স এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সংগঠনের নেতা জানান, বুধবার রাত আটটার পর শুরু হওয়া বৈঠকটি ১০টার দিকে শেষ হয়। কাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা চিঠি হস্তান্তর করা হবে। চিঠিতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, বিজিএপিএমইএ, বিটিটিএলএমইএ ছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে ক্রেতারা যখন আমাদের লকডাউনের কথা শুনবে, তখন তারা ক্রয়াদেশ অন্য দেশে দেবে। আবার ঈদের পর লম্বা সময় বন্ধ থাকলে চলমান ক্রয়াদেশ পণ্য সময়মতো রপ্তানি করা যাবে না। তখন উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হতে পারে। সেটি হলে আমাদের লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাবে।’

বিকেএমইএর এই সহসভাপতি বলেন, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার বা ৯৮০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। ঈদের পর দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকলে বিপুল পরিমাণ অর্থের পোশাক রপ্তানি আটকে যাবে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়িক ক্ষতি ছাড়া দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকলে করোনা ছড়িয়ে পড়ারও শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ৩-৪ দিন বন্ধ দিলে অনেক শ্রমিক কর্মস্থল ছাড়বেন না। তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। তারপর তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটি আমরা মেনে নেব। ঈদের পর বিধিনিষেধে কারখানা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিলে সেটি আমরা যথাযথভাবে পরিপালন করার চেষ্টা করব।’

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিলে সরকার লকডাউন দিলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন চালানোর সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ জুলাই থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু রয়েছে।

তবে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল পর্যন্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। তারপর আবার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হবে। চলবে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ের কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে।

বৃহস্পতিবার বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

করোনার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের পোশাকের প্রচুর ক্রয়াদেশ পাচ্ছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান আগামী মার্চ পর্যন্ত তাদের কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী ক্রয়াদেশের বুকিং পেয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ সক্ষমতার চেয়েও বেশি। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে যখন করোনা ছিল না, তার তুলনায় বর্তমানে ৫-১০ শতাংশ বেশি ক্রয়াদেশ আসছে বলে জানালেন পোশাকশিল্পের কয়েকজন মালিক।

আসছে শীত মৌসুম, ক্রয়াদেশও ভালো পেয়েছিল কারখানাগুলো। সে কারণে গত এপ্রিল থেকে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

গত মাসে শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের (২ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা) পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। করোনার কারণে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি কমে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলার হয়েছিল। ওই বছরের শেষ তিন মাস মহামারিতে বিপর্যস্ত হলেও সদ্য বিদায়ী অর্থবছর পুরোটাই ছিল করোনাময়। তারপরও বিদায়ী অর্থবছরে ভালো করেছে বাংলাদেশ।

এদিকে বিজিএমইএ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। এ সময় ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে আলোচনা হবে।