পশুর হাটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বাইরে থেকে

পশুর হাটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বাইরে থেকে

রাজধানীর পশুর হাটকে কেন্দ্র করে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা। আর এর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। শুধু পশুর হাটই নয়; সাম্প্রতিক সময়ে টেন্ডারবাজিসহ রাজধানীর অনেক অপরাধ কর্মকাণ্ডই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দেশের বাইরে বসে। এর নেতৃত্বে রয়েছে জাফর আহমেদ মানিক এবং জিসানসহ কয়েকজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে অবস্থান করছে। আর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান দুবাইয়ে পালিয়ে আছেন। মাঝে মধ্যে লন্ডন ও সিঙ্গাপুর যান। তিনি এখনও মগবাবাজার, মালিবাগসহ রাজধানীর আরো বেশ কয়েকটি এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্তত ২০ জন সহযোগী দিয়ে এলাকার চাঁদাবাজিসহ অপরাধজগত নিয়ন্ত্রণ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানিক শাহরিয়ার সোহেলসহ তার সহযোগীদের দিয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দরপত্র দেয়া ক্রীড়া পরিষদের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজ ভাগ করে নিয়েছে নতুন এই সিন্ডিকেট, যার নেতৃত্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক ও জিসান রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া কমলাপুর আইসিডিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে এসব অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। বিশেষ করে গত ২৩ জুন বিভিন্ন জেলায় টেনিস কোর্ট নির্মাণের ৫০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র ভাগাভাগি হয়। ৩০ জুন ৭০ কোটি টাকার ভাগাভাগির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও করোনা মহামারীর ব্যাপক বিস্তারের কারণে অফিস আদালত বন্ধ হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। চলতি মাসের ১৬ তারিখে আরো ৫০ কোটি টাকার দরপত্র কাজের বিষয়টি নিয়েও কাজ চলছে। এসব কাজে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগীরা প্রভাব বিস্তার করছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এ দিকে, সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বাড়ায় খুনাখুনিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা পুলিশের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতনদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠক থেকে সতর্ক করা হয়েছে ডিএমপির সব থানা পুলিশকে। থানার দ্বারস্থ হওয়া ভুক্তভোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তাদের।

কয়েকটি পশুর হাটের ইজারাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। একই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদাও দাবি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এদের সাথে কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও জড়িত রয়েছেন।

জানা গেছে, ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় রাজনৈতিক কিছু নেতাকর্মীকে ব্যবহার করা হয়। টিপু ও আবুল নামের দু’জন তাদেরকে ব্যবহার করে থাকেন। তাদের অনেকেরই দলে কোনো পদ নেই। এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ। সিন্ডিকেটের বাইরে যেসব ঠিকাদার কাজের দরপত্র দাখিল করতে চান তাদের হুমকি-ধমকি দেয়ার কাজে এসব সন্ত্রাসী কর্মীদের ব্যবহার করা হয়। রানা এবং পান্না নামের দু’জন সামনে থেকে তাদের নেতৃত্ব দেন। অস্ত্র মামলায় ১৬ বছর সাজা খাটার পর ৪ মাস আগে কারামুক্ত হন পান্না।

এ ছাড়া আমিনুল, রিফাত ও হিরক আরো তিনজন রয়েছেন; যাদের নামেও রয়েছে মাদক কারবারের অভিযোগ। হিরক মতিঝিল কলোনি এলাকার অপরাধ কাজের নিয়ন্ত্রক বলে সবাই জানেন। ২০২০ সালে যুবলীগ নেতা বাশার হত্যা মামলার আসামি রিফাত। রানা দলীয় নেতা কাউছার হত্যা মামলার আসামি হলেও পরে চার্জশিটে তার নাম বাদ যায়। এ দিকে, পশুর হাটকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।ভুক্তভোগী কারো অভিযোগ পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

এমজে/