২০ শতাংশ মধ্যবিত্তকে গরীব বানিয়েছে করোনা মহামারি

২০ শতাংশ মধ্যবিত্তকে গরীব বানিয়েছে করোনা মহামারি

দেশের ২০ শতাংশ মধ্যবিত্তকে দরিদ্র বানিয়েছে করোনা মহামারি। গরীবরা হয়েছেন হতদরিদ্র, ধনীরা আরও ধনী।

করোনায় দেশে আয় বৈষম্য প্রকট হয়েছে। স্বচ্ছল মধ্যবিত্তরা কাজ হারিয়ে নেমে গেছেন দরিদ্রের কাতারে। বিপরীতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ধনীদের পকেট। ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা। এমন অবস্থা কল্যাণকামী অর্থনীতির জন্য আদর্শ নয়, মানছে সরকারও। বৈষম্য কমাতে আয়বর্ধক কাজের সুযোগ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বহু বছরের সংসার, স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আবারও গ্রামমুখী মানুষ। করোনা আঘাতের এমন উল্টোস্রোতের দেখা মিলছে গত বছর থেকেই।

গবেষণা বলছে, ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে গরীব হয়েছেন। যা মোট জনগোষ্ঠীর ১৪ দশমিক সাত পাঁচ শতাংশ।

করোনাভাইরাস প্রভাব ফেলেছে সমাজের শ্রেণি কাঠামোতেও। গত এপ্রিলে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের লেখা ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র : ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে বই বলছে, ২০২০ সালে, মহামারি শুরুর আগে, দেশে দরিদ্র পরিবার ছিলো ২০ শতাংশ, মধ্যবিত্ত ৭০ শতাংশ আর ধনী ১০ শতাংশ। কিন্তু প্রথম লকডাউনের পর, ২০ শতাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার গরীব হয়েছে।

অথচ এমন দুর্দিনে, দেশের মোট আয়ে, ১০ শতাংশ ধনী পরিবারে হিস্যা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। যা আগে ছিলো ৩৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও বলছে, ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ১৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ড. আবু ইউসুফ বলেন, যারা একদম নিম্ন-মধ্যবিত্ত তারাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। নতুনভাবে সৃষ্ট যে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই তালিকাগুলো আমরা গত ১৬ মাসেও করতে পারেনি। এগুলোর একটা তালিকা করে যাচাই-বাছাই করে এই মহামারির সময় যদি তাদের কিছুটা অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়া যায় তাহলেও তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে।

আয় বৈষম্য নির্ধারণ করা হয় গিনি সহগ দিয়ে। এর মান দশমিক ৫ হলে, মারাত্বক বৈষম্য ধরা হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর আগের হিসাব অনুযায়ী এই মান ছিলো দশমিক চার আট। ড. আবুল বারকাতের হিসাব অনুযায়ী, এই মান এখন দশমিক ৬ ছাড়িয়েছে। আরেক সুচক পালমা অনুপাত তিন হওয়া মানে বিপদজনক অবস্থায় আয়বৈষম্য। কিন্তু বাংলাদেশে তা এখন ৭ দশমিক পাঁচ তিন। অর্থাৎ বিপদসীমার দ্বিগুণেরও বেশি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। অর্থনৈতিক শক্তি কিন্তু আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। যা নীতিতে আমরা এখন অর্থনীতি পরিচালনা করছি, এটা হচ্ছে পুঁজিবাদি নীতি, খোলাবাজার নীতি। এই আওতায় ধনীরা আরও ধনী হবে। আমরা যেখানে স্বান্তনা পাই সেটা হচ্ছে যারা ভয়ংকর গরীব ছিল তারা কম ভয়ংকর গরীব হবে।

চলতি বাজেটে গরীব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এসব কার্যক্রমের উপর ভর করে, শিগগিরই আয় বৈষম্য কমবে বলে আশাবাদী সরকার।

এমজে/