বন্ধ হতে পারে হেলেনার জয়যাত্রা টিভি

বন্ধ হতে পারে হেলেনার জয়যাত্রা টিভি

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরে আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযান চালিয়েছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ সময় টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৪টায় অভিযান পরিচালনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে, রাত ২টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের তিন নম্বর রোডে জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ বলেন, ‘রাতে গুলশানের বাসায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জয়যাত্রা নামে তার একটি আইপি টেলিভিশন রয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে মিরপুর জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। যদিও সম্প্রচার চ্যানেল হিসেবে যেসব সেটাআপ থাকা দরকার তার সবকিছুই রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হেলেনা তার জয়যাত্রা টেলিভিশনের জন্য সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলেন। এমনকি দেশের বাইরেও প্রতিনিধি নিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ার কারণে পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এখানে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অফিস পেয়েছি। এ বিষয়েও তদন্ত করা হবে।’

চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে র‍্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে।’

এর আগে, গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‍্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

নামের সঙ্গে লীগ যুক্ত করে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের অনুমোদনহীন একটি সংগঠনের সভাপতি পদে নাম আসার পর তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে দলটির মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি।

এই উপ-কমিটিতেই সদস্য ছিলেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক পদে থাকা হেলেনা জাহাঙ্গীর। জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।

সম্প্রতি ফেসবুকে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসে। সব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা তিনি অস্বীকার করেছেন।

কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর?

বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টারকে ঘিরে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি।

হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি।

জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছেন রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে। প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার কর্মী কাজ করছেন তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাকে ওই কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কয়েকটি বিদেশযাত্রার সফরসঙ্গীও হয়েছিলেন তিনি।

তবে হেলেনা জাহাঙ্গীর আগে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে শোনা যায়। মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। হেলেনার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা।

হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১-তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে হেলেনা শুরু করেন প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ব্যবসা। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে তিনি গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, জেসি এমব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড। সবকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।

হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।