হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হচ্ছে: র‍্যাব

হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হচ্ছে: র‍্যাব

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শুক্রবার বিকেলে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‍্যাবের সদর দপ্তরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া মাদক, বিদেশি মুদ্রা ও বন্যপ্রাণীর চামড়া জব্দের ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া ‘জয়যাত্রা’ নামক টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনার কারণে আলাদা মামলা হবে বলে জানান র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে র‍্যাব অভিযান চালায় গুলশান ২ নম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের পেছনে ৩৬ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায়। প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান চলে। পরে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পশু সংরক্ষণ আইন ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে।’

এর আগে গত রোববার আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ হতে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’

জানা যায়, নানা বিষয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠন করেন। এতে নিজেকে সভাপতি এবং মাহবুব মনিরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এই সংগঠনে জেলা-উপজেলা ও বিদেশ শাখায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার পর ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

সংগঠনটির দাবি, গত দুই-তিন বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

গত সোমবার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে ফেসবুক লাইভে এসে একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “পুরুষেরা এত খারাপ কেন? সব পুরুষ নয়, কিছু কিছু কাপুরুষ, এত খারাপ। মেয়েদের পেছনে লেগে থাকে, লজ্জা করে না আপনাদের মেয়েদের পেছনে লেগে থাকতে। মেয়েরা না মায়ের জাতি? মা না থাকলে আপনারা জন্ম হতেন না। সেই মেয়েদের আপনারা অপমান করেন, লেলিয়ে দেন—‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের পেছনে লাগো’।”

হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি সরকারের জন্য একটা চ্যানেল চালাচ্ছি। সেটা জয়যাত্রা টেলিভিশন। সেই চ্যানেল আমি ভতুর্কি দিয়ে চালাচ্ছি প্রায় চার বছর যাবৎ। আমি চ্যানেলের বাইরে কোনো কাজ করতে পারি না, এত মনোযোগ দিতে হয় আমাকে।’