গণটিকা: সতর্কতার অভাব, অব্যবস্থাপনা-বিপদের শঙ্কা

গণটিকা: সতর্কতার অভাব, অব্যবস্থাপনা-বিপদের শঙ্কা

করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে দুনিয়া। বাঁচা-মরার লড়াই। এ লড়াইয়ে প্রধান হাতিয়ার টিকা। কিন্তু সেখানেও বৈষম্য। পৃথিবী যেন দুই ভাগে বিভক্ত। উন্নত দুনিয়া যখন বুস্টার ডোজের কথা চিন্তা করছে গরিব দেশগুলো বলতে গেলে টিকা পায়নি। শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে সবার টিকা পেতে ৫৭ বছর লাগবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও টিকাদানে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

তবে টিকাদানে গতি আনার চেষ্টা জোরদার করেছে সরকার। এরইমধ্যে গতকাল শুরু হয়েছে টিকা ক্যাম্পেইন। একদিনে টিকা দেয়া হয়েছে ২৮ লাখের বেশি মানুষকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় মৃত্যুর মিছিল থামাতে টিকার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে টিকা দানের গতি বাড়াতেই হবে। দিনে গড়ে ৬-১০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার টার্গেট নিতে হবে। কিন্তু গতকাল টিকা ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে বেশ অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে সারা দেশেই। টিকাদান কেন্দ্রে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। গাদাগাদি করে মানুষ লাইনে দাঁড়ান। ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। ছিল না কোনো শৃঙ্খলাও।

প্রভাবশালীদের দেখা গেছে, লাইন ছাড়াই টিকা দিতে। করোনার উপসর্গ নিয়েও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকেরই ছিল জ্বর-সর্দি। অথচ বিশেষজ্ঞদের আগেই পরামর্শ ছিল, করোনা বা এর উপসর্গ নিয়ে যেন কেউ টিকা না দেন। এক্ষেত্রে গ্রামে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করারও কেউ ছিল না। কয়েকটি স্থানে একই ব্যক্তিকে দুই বার টিকা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা উদ্বেগজনক। সিলেটের গোয়াইনঘাটে মাসুদা বেগমকে দুই বার টিকা দেয়া হয়। একই ঘটনা ঘটেছে বালিয়াকান্দিতে। কোথাও কোথাও টিকা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রভাবও দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অতীতে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সারা দুনিয়ার জন্যই। করোনা টিকার ক্ষেত্রেও আমাদের উদাহরণ তৈরি করতে হবে। টিকা সংগ্রহের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে গণটিকাদানের ক্ষেত্রে। টিকা কেন্দ্রের নেতৃত্বে থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই। এক্ষেত্রে নিয়োগ করতে হবে সর্বশক্তি। যদি সপ্তায় ছয় দিন টিকা দেয়া যায় সেক্ষেত্রে ভিড় অনেকটাই কমে আসবে। যাদের করোনার উপসর্গ আছে তাদের টেস্টের আওতায় আনতে হবে। লাইনে সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে বয়স্কদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের জ্বর আছে তাদের টিকা দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন তাদের সতর্ক থাকতে হবে। যারা টিকা নিবেন তাদেরকেও বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনে কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল, আবার কিছু ভালো দিকও ছিল। আমাদের ভ্যাকসিন নিতেই হবে। যেকারণে সামনের দিনগুলোতে যেনো কোনো অব্যবস্থাপনা না হয় সে ব্যাপারে সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, বয়স্কদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে আগে।

এমজে/